প্রধান শিরোনামসাভার

সাভারের ‘১ টাকার দোকানে’ কোটি টাকার খুশি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যারা ত্রাণ নিতে সংকোচ বোধ করেন, তাদের জন্য সাভারে ‘এক টাকার দোকান’ নামে ভ্রাম্যমাণ দোকান চালু করেছে ‘ছবিঘর’। এই দোকান থেকে পুরো রমজান মাসে কয়েক হাজার অসহায় পরিবারকে খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।

শুক্রবার(১৬ এপ্রিল) সাভার থানা রোড এলাকায় খাবার বিতরণের মাধ্যমে এ দোকানের কার্যক্রম শুরু হয়। স্টলের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ ৯ টি ভ্যানের মাধ্যমে সাভারের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এক টাকার বিনিময়ে খাবার দেওয়া হয়। এক টাকার বিনিময়ে খাবার পাওয়া যাবে এটা অসম্ভব ব্যাপার হলেও তা সম্ভব করে দেখিয়েছে একদল তরুণ। দিনে প্রায় ৫০০ মানুষের কাছে এক টাকার বিনিময়ে ইফতার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

এক টাকার দোকান আগে এক টাকায় এক বেলা ইচ্ছে পূরণ নামে চালানো হলেও তা ২০২০ সালে নাম পরিবর্তন করে এক টাকার দোকান করা হয়। সহমর্মিতায় রোজা পালনের পরিকল্পনা নিয়েই তারা এই কাজ শুরু করেছে। করোনা মহামারীর জন্য তারা সব ধরনের সতর্কতা নিয়ে কাজ করছে।সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা সহ সবাইকে স্যানিটাইজ করে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

খাবার তুলে দিচ্ছেন একজন স্বেচ্ছাসেবী।

ছবিঘরের পথচলা শুরু হয় ২০১৮ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা সাভার পৌর এলাকার কলেজছাত্র প্রিন্স ঘোষ ও তাঁর চার বন্ধু। শুরু থেকে ছবি নিয়ে কাজ করলেও দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের হাত খরচ বাঁচানো অর্থসহ পরিবার ও প্রবাসে থাকা স্বজনদের চাঁদায় অসহায় ও কর্মহীন মানুষকে এক টাকার বিনিময়ে তাঁরা এক মাস ধরে খাদ্যসহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তাদের এই কার্যক্রমে ছবিঘরের পাশে দাড়িয়েছে জিরো ফাউন্ডেশন, উই আর এসসিপিসসিয়ান, সাভার বন্ধুসভা ও পথে পথে পাঠ।

ছবিঘরের সভাপতি হাসিবুল হাসান ইমু বলেন, অনেকেই ত্রাণ নিতে সংকোচ বোধ করেন। তাই উপকারভোগীরা যাতে মনে করেন ত্রাণ নয়, টাকার বিনিময়ে তাঁরা পণ্য কিনে নিচ্ছেন-এই ধারণা থেকে এক টাকার দোকান নামে ভ্রাম্যমাণ দোকান চালু করা হয়। যে কেউ ওই দোকান থেকে এক টাকার বিনিময়ে চারজনের একটি পরিবারের জন্য এক সপ্তাহের খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী কিনে নিতে পারবেন। করোনার প্রভাব যত দিন থাকবে তত দিন এই সহায়তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন তিনি।

জিরো ফাউন্ডেশন এর সভাপতি হিরন আচার্য জানান তারা ভাল কাজের সাথে সব সময় আছেন।একসাথে অনেক মানুষকে সাহায্য করা যাবে এই ভেবেই তারা ছবিঘরের এক টাকার দোকানের সাথে সামিল হয়েছে। উই আর এসসিপিএসসিয়ান এর সদস্য তালহা জানায় তারা ছবিঘরের এক টাকার দোকান এর সাথে থেকে এই মহৎ উদ্যোগকে সফল করতে পারায় তারা খুশি এবং এভাবেই তারা সবার পাশে দাঁড়াতে চায়। আর করোনা মহামারীর জন্য অনেকে কাজ হারিয়েছে তাই তাদের এই সময়ে এই সাহায্য অনেক বেশি দরকার।

প্রিন্স ঘোষ ঢাকা অর্থনীতিকে বলেন, আজকে প্রথম দিনে ৫০০ জন মানুষের হাতে আমরা ডিম খিচুরী তুলে দিয়েছি। এতে আমাদের মাত্র ১২ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে এ খরচ বহন করেছি। আমাদের পরিচিতরাও অনেকেই বিভিন্ন ভাবে আমাদের পাশে দাড়িয়েছেন। অনেকেই আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। খাবার কার্যক্রমের পাশাপাশি ঈদের আগে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করবো আমরা। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে আমরা আরো বড় পরিসরে এ কার্যক্রম চলমান রাখব। দরিদ্র মানুষ যখন এ খাবার হাতে পেয়েছে তখন তাদের চোখে মুখে যে স্বস্তি দেখেছি তাতেই আমার কাজের মূল্য পেয়ে গেছি। এ যেন আমার কাছে কোটি টাকার চেয়েও বেশি। এই মানুষদের হাসি দেখেই কাজ করার স্পৃহা বেড়ে যায়।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close