প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনসাভারস্থানীয় সংবাদ
সাভারের মেহেদী চাষীরা বিপাকে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনা, লকডাউনসহ নানা কারণে ব্যবসার মৌসুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সাভারের মেহেদী চাষীরা। কঠোর লকডাউন থাকায় বাজারে মেহেদী পাতা বেচা কেনা বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। মেহেদী বাগানের কাজ না থাকায় অসহায় নারীরা এখন ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও চরম অর্থ সংকটে সময় পার করছেন তারা।
রাজধানীর অতি সন্নিকটে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের প্রচুর মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে মেহেদী পাতার চাষের সাথে। বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানে হাত রাঙ্গাতে মেহেদির চাহিদা বা প্রচলন সেই আদিকাল থেকেই। এছাড়া ঈদের উৎসবে হাত রাঙ্গাতে মেহেদির কোন বিকল্পই নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন পার্লারে মেহেদির চাহিদা থাকে বছর জুড়েই। নারী-পুরুষ সবার মাঝেই এই মেহেদী ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়। আবার হাত রাঙ্গানোর পাশাপাশি মেহেদীর রয়েছে নানান ওষুধী গুণ।
কিন্তু করোনা ভাইরাস ও দেশে কঠোর লকডাউন থাকায় মেহেদী পাতা বাজারে বেচা কেনা বন্ধ থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। বিক্রি না হওয়ায় মেহেদী পাতা গাছেই ঝরে যাচ্ছে। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তাপদাহে মেহেদী গাছ মরে যাচ্ছে বাগানেই। সব মিলিয়ে চরম সংকটে দিন কাটছে এ ইউনিয়নের মেহেদী চাষীরা। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা।
এদিকে অনেক চাষী মেহেদী চাষ বাদ দিয়ে গরুর গো খাদ্য হিসেবে নেপাল থেকে আনা নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা মেহেদী পাওয়া গেলেও ব্যবহারকারীদের কাছে চাষ হওয়া প্রাকৃতিক মেহেদী পাতার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। মেহেদী প্রেমী বা অন্যান্য ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী, লুটেরচর, বাহেরচরসহ বিভন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে মেহেদি চাষ করে আসছিলেন কৃষকরা। বেচা কেনা ভালো হওয়ায় দিনে দিনে এ জনপদে বাড়ছিলো মেহেদি চাষ। অনেক পরিবার মেহেদি চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছিলেন। খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি এ ইউনিয়নের চাষিরা নানা প্রজাতির ফুল ও লাভজনক ফসলের চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে মেহেদী পাতা বেচা কেনা বন্ধ থাকায় তারা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন।
মেহেদী চাষী আয়নাল মিয়া বলেন, মেহেদি চাষে উৎপাদন খরচ কম। প্রতিমাসে কীটনাশক ছাড়া আর কোনো খরচ হয় না। একবার চারা লাগানোর পর গাছ বাঁচে ১০ থেকে ১৫ বছর। বাগান থেকে পাতা কাটা হয় তিনবার। বাজারে মেহেদী পাতার আঁটি পাঁচ’শ টাকা দরে বিক্রি হতো। গতবার বন্যায় গাছ মারা গেছে কিছু। এইবার পানিও নেই আর আছে লকডাউন। গতবারের লস এইবার পুষিয়ে নেয়ার চিন্তা থাকলেও হয়ত পারবোনা। আল্লাহই ভালো জানে আমাদের কি হবে !
বাগানে মেহেদী কিনতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া নওরিন জানান, হাতে বাহারি নকশা তৈরিতে মেহেদির কোন জুড়ি নেই। বাজারের কেনা মেহেদি অনেকটা ভেজাল থাকে। তবে চাষ করা মেহেদি অনেকটা গুণগত। তাই এ চাষ করা মেহেদি আমাদের পছন্দের তালিকায় থাকে। আমার বাসা কাছে তাই নিজেই বাগানে চলে এসেছি মেহেদী সংগ্রহ করতে।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নাজিয়াত আহমেদ বলেন, এবার এ উপজেলায় কয়েক’শ হেক্টর জমিতে মেহেদী চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষাবাদ কৌশল, কখন, কিভাবে চাষ করা যায় এসব তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে। জমি তৈরি কৌশল, সার প্রয়োগের নিয়মাবলী ইত্যাদি তথ্য কৃষকদের দেওয়া হয়ে থাকে। মেহেদী চাষীদের উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ভিডিও দেখুন:
/আরএম