দেশজুড়ে

সাগর-রুনি হত্যা : জড়িতদের ছবি প্রস্তুতে চলছে প্রচেষ্টা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ডিএনএ পরীক্ষায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষের নমুনা পাওয়া গেছে। তাদের চিহ্নিতের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা। ওই ল্যাবের ডিএনএ থেকে অপরাধী/জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুতের সক্ষমতা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পূর্বের প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ ফলাফল সমন্বয় করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে ছবি প্রস্তুতের জন্য চার্জ হিসাবে মার্কিন ওই প্রতিষ্ঠানকে ১২০০ ডলার ফি পরিশোধ করা হয়েছে।

সাগর-রুনি হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত সাগর-রুনি হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন তদন্ত সংস্থা র‌্যাবকে। আদালতের আদেশে ৫ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম আদালতে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অগ্রগতি প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলাটি ২০১৯ সালের ৭ জুলাই থেকে আমি তদন্ত করে আসছি। তদন্তকালে পূর্ববর্তী তদন্তকারী অফিসার তদন্তের আনুষঙ্গিক কাজ করাসহ মোট আটজন আসামি গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ছয়জন বর্তমানে জেল-হাজতে আছেন। দুজন জামিনে মুক্ত আছেন।’

‘মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে জব্দকৃত আলামত ডিএনএ (DNA) পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে আইএফএস (Independent Forensic Service), ইউএসএ (USA) বরাবর প্রেরণ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, পূর্বে প্রেরিত আলামতসমূহ এবং গ্রেফতারকৃত আসামিদের Buccal Swab পর্যালোচনায় অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। তদন্তকালে উক্ত অজ্ঞাতনামা পুরুষ ব্যক্তিদ্বয়কে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে প্যারাবন স্ন্যাপশট (Parabon Snapshot) নামীয় মার্কিন অপর একটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানটির ডিএনএ থেকে অপরাধী/জড়িদ ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে।’

‘প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পূর্বের প্রতিষ্ঠান আইএফএস-এর সমন্বয়পূর্বক ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আইএফএস কর্তৃক সংরক্ষিত বর্ণিত ডিএনএ প্যারাবন স্ন্যাপশট নামীয় প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের সার্ভিস চার্জ হিসাবে ১২০০ মার্কিন ডলার ফি নির্ধারণ করায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আইএফএস র‌্যাব কর্তৃপক্ষকে উল্লিখিত পরীক্ষার অগ্রগতির বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল প্রেরণ করেছি। আইএফএস ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কোনো মতামত প্রদান করেনি। ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টাসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেয়া র‌্যাবের অগ্রগতি প্রতিবেদনে ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে দুই অপরিচিত পুরুষের সম্পৃক্ততা’ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজন অপরিচিত পুরুষ জড়িত ছিল। সাগরের হাতে বাঁধা চাদর এবং রুনির টি-শার্টে ওই দুই পুরুষের ডিএনএ’র প্রমাণ মিলেছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এই মামলায় তানভীরের অবস্থা রহস্যজনক। এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি (বিচারিক আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে মুক্ত) দেয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি। আমেরিকা পাঠানো ডিএনএ নমুনার সঙ্গে অপরিচিত দুই ব্যক্তির ডিএনএ’র মিল পাওয়া গেছে।’

এদিকে আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সাড়ে আট বছর পার হলেও মামলাটির কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় হতাশায় ভুগছে সাগর-রুনির পরিবার। পরিবারের প্রশ্ন, হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে আর কত সময় লাগবে? বিচার পাওয়ার আশায় আর কতদিন পথ চেয়ে বসে থাকতে হবে? আমাদের পরিবার কি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার আদৌ পাবে?

মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটির তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে কোনো কিছুই জানান না। মামলার বিচার নিয়ে আমাদের পরিবার হতাশ।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি দম্পতি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন। খুন হওয়ার পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইতোমধ্যে ৭৫টি ধার্য তারিখ পার হয়েছে।

মামলায় আটজনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে মিন্টু, কামরুল হাসান, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও এনাম আহম্মেদ কারাগারে আছেন। পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close