দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

সাগরে মানুষের বিচরণ কমে যাওয়ায় বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে লকডাউন বেশকিছু মানুষের কাছে অভিশাপ হলেও ইলিশ শিকারিদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কারণ লকডাউনে নদী ও সাগরে মানুষের বিচরণ কমে যাওয়ায় বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। এজন্য আশীর্বাদ হিসেবে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

সেসব ইলিশ সারাদেশে সরবরাহ করতে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে নিয়ে আসা হয়। কীর্তনখোলা নদী থেকে খাল হয়ে একের পর এক ইলিশবোঝাই ট্রলার এসে ভিড়ে ইলিশ মোকামে। সঙ্গে সঙ্গে সেসব ট্রলার ঘিরে ধরেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা।

আড়তদাররা এসব ইলিশ কিনে স্তূপ করে রাখেন। এজন্য আড়তগুলোর সামনে ভিড় লেগেই থাকে। রীতিমতো ইলিশের উৎসব শুরু হয়েছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দরদাম করেন খুচরা ক্রেতারাও। বিকিকিনির ধুম পড়ে নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে।

জেলে ও আড়তদাররা বলছেন, চারদিন ধরে পোর্ট রোড মোকামে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ ইলিশই সাগরের। ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশালে ইলিশের দাম কমেছে। শনিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) মোকামে এক কেজি সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা। তবে দামের দিক থেকে এখনই সস্তা বলা যাচ্ছে না।

মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টানা ৬৬ দিন বরিশাল-ঢাকা নৌপথে বন্ধ ছিল লঞ্চ চলাচল। নদী তীরবর্তী অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিল এসময়। নৌযান চলাচল বন্ধ ও বেশিরভাগ শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় বরিশাল বিভাগের নদ-নদীতে অনেক কম হয়েছে দূষণ। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল বিভিন্ন জেলায়। নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারেননি অনেক জেলে।

ফলে নদীতে বাধাহীনভাবে চলাফেরা করতে পেরেছে ইলিশ। সাগরেও দূষণ কমেছে। এতে ইলিশের বংশবিস্তার ও প্রজননসহ সব কিছুই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ফলে লকডাউন বেশকিছু মানুষের কাছে অভিশাপ হলেও ইলিশ শিকারিদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কয়েক দিন ধরে সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে পোর্ট রোড মোকামে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। আগামী আমদানি আরও বাড়বে বলে আশা করছি। অভিজ্ঞতা বলছে, এবার বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে। আমাদের ধারণা ইলিশ উৎপাদনে এবার বিগত দিনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেও জানান বিমল চন্দ্র দাস।

উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের আট জেলায় ‘ইকো ফিশ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদফতর। এর আওতায় ইলিশের বংশবিস্তার, প্রজননকাল নির্ধারণসহ নানা দিক নিয়ে গবেষণা করা হয়।

ইকো ফিশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক বলরাম মহালদার বলেন, ইলিশের যাতায়াতের জন্য তার চলার পথ অন্তত ৪০ ফুট গভীর হতে হয়। উজান থেকে নেমে আসা পানি নদ-নদী দিয়ে সাগরে নামছে। এ বছর বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। নদ-নদী পানিতে ভরপুর। দূষণ কম হওয়ায় এ বছর নদীর পানি বিগত বছরগুলোর তুলনায় পরিষ্কার। নদীতে পানির পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সাগর থেকে অবাধে নদ-নদীতে ইলিশ চলাচল করতে পেরেছে। সমুদ্রের নোনা পানি থেকে ইলিশ যতই নদীর উজানে যেতে থাকে ততই শরীর থেকে ঝরতে থাকে লবণজাতীয় পদার্থ। ইলিশ যত বেশি সময় মিষ্টি পানিতে থাকতে পারবে এবং উজানে আসতে পারবে, দেহ থেকে লবণসহ বিভিন্ন খনিজজাতীয় পদার্থ ততই কমতে থাকবে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকবে স্বাদও।

গবেষক বলরাম আরও মহালদার বলেন, এসব দিকে বিবেচনা করে বলা যায় এবার শুধু স্বাদে-গন্ধে নয়, আকারে বড় এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ মিলবে উপকূলের নদীগুলোতে। দূষণ কম ও অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় সাগরের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।

বরিশাল পোর্ট রোডের আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু বলেন, মোকামে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। আগে প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ মণের মতো ইলিশ আমদানি হতো। সেখানে গত চারদিনে ইলিশ আমদানি প্রায় আটগুণ বেড়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত আড়াই হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। আমদানির বেশির ভাগই সাগরের ইলিশ।

অজিত কুমার দাস মনু আরও বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। সামনে অমাবস্যার জো। তখন ইলিশ কিছুটা কম ধরা পড়বে। এরপর থেকে নদ-নদী ও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। সে সময় প্রতিদিন পাঁচ থেকে হাজার মণ ইলিশ আমদানির আশা করছি। তখন দামও কমে যাবে।

দামের বিষয়ে অজিত কুমার দাস মনু বলেন, শনিবার পোর্ট রোড মোকামে দেড় কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে এক হাজার ২০০ টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। রফতানিযোগ্য এলসি আকারের (৭০০-৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ২৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৬০০ টাকা। হাফ কেজি বা ভেলকা আকারের (৪০০-৫০০ গ্রাম) ইলিশের মণ ১৮ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৪৫০ টাকা। গোটরা আকারের (২৫০-৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৩৫০ টাকা।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close