দেশজুড়ে
সাংবাদিকদের নানাবিধ পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সংবাদমাধ্যমের মালিকদের কার কত খেলাপি ঋণ আছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, তারা (মিডিয়া মালিকরা) যেন তাদের টাকাটা শোধ দিয়ে তারপরে তাদের পত্রিকায় এ ব্যাপরে (খেলাপি ঋণ নিয়ে) লেখেন, সে ব্যাপারে আমার অনুরোধ থাকবে।”
‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের জন্য সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি অসুস্থ থাকায় শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরুতে এবারের বাজেটের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। পরে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত ১০ বছরে ২৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পেলেও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সফল হচ্ছে না কেন।
জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চান তিনি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
সেই প্রতিবেদক নিজের পত্রিকার নাম বলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা এখানে পত্রিকায় চাকরি করেন, তাদের আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করব, আপনারা কি একটা খবর নেবেন, যে আপনাদের মালিকরা কে কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, আর ঋণগুলো শোধ দিয়েছে কি না।
“আপনরা দয়া করে সমস্ত ব্যাংকগুলি থেকে এ তথ্যটা আগে বের করেন, যত মিডিয়া এখানে আছেন… প্রত্যেকেই বলবেন যে আমি অনুরোধ করেছি আপনাদের, যে কোন মালিক কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা শোধ দেয়নি বা খেলাপি হয়ে সেটাকে আবার পুনরায় ই (পুনঃতফসিল) করে গেছেন। এটার একটা হিসাব বের করলে আমাকে আর প্রশ্ন করা লাগবে না ।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “যার যার মালিককে বলেন, খেলাপি ঋণ শোধ দিতে, তাহলে আর খেলাপি ঋণ থাকবে না।”
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ব্যাংক খাতে সুদের হার অত্যন্ত বেশি, আর সুদ ধরা হয় চক্রবৃদ্ধি হারে। ফলে যখন হিসাব প্রকাশ করা হয় তখন চক্রবৃদ্ধি হারে খেলাপি ঋণের পরিমাণটা অনেক বড় দেখায়।
“প্রকৃত ঋণটা যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে অত বড় না। এর পেছনে নিশ্চয় কোনো ইন্টারেস্ট আছে যেজন্য ওই চক্রবৃদ্ধি হারে যেটা বর্ধিত সুদ, সেটাসহ সেটাকে খেলাপি ঋণ ধরা হয়। সেটা একটা দুর্বলতা আছে আমাদের। সেটা আমরা অ্যাড্রেস করে এবং সেটা যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”
যারা খেলাপি হয়েছেন, তাদের তা পরিশোধ করার জন্য ‘একটা সুযোগ’ দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই সাথে সাথে সব পত্রিকাগুলোর মালিকরা কে কত ঋণ নিয়েছে, বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা অন্যান্য মিডিয়া, সেগুলোর একটা হিসাব নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায়, গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের (রাইট অফ) স্থিতি ছিল ৩৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ যোগ করলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৫০ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালেন্স শিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন-রাইট অফ বলে। যদিও এধরনের ঋণগ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন।
বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ আর ‘এক টাকাও বাড়বে না’।
সেজন্য ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিলসহ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর সে কথা ফলেনি, খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।