দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

সরকারের পাওনা ১৩ হাজার কোটি টাকা

চার সেলফোন অপারেটর

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বর্তমানে দেশে চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে তিনটি বেসরকারি ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত। বন্ধ হয়ে যাওয়া এক অপারেটরসহ চার মোবাইল অপারেটরের কাছে সরকারের বকেয়া জমেছে ১৩ হাজার ৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৯৩৪ টাকা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জাতীয় সংসদে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দেশে এখন যে চারটি কোম্পানি কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো হলো গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক। এর মধ্যে টেলিটক রাষ্ট্রায়ত্ত। তবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন হলেও এ অপারেটরের কাছে সরকারের বকেয়া রয়েছে। অন্য তিনটি হলো গ্রামীণফোন, রবি-আজিয়াটা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেল। কেবল বাংলালিংকের কাছে কোনো বকেয়া নেই।

গতকাল সংসদে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের দেয়া এক প্রশ্নোত্তরে এসব তথ্য জানান মোস্তাফা জব্বার। এ সময় তিনি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে কত বকেয়া তার পরিমাণও তুলে ধরেন। সংসদে দেয়া মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের কাছে বকেয়া ১ হাজার ৬৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

ওই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোনের অডিট আপত্তির টাকার পরিমাণ ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করেছে ২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা। রবি আজিয়াটার ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ টাকা। এর মধ্যে ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। তাদের বকেয়া ৭২৯ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ টাকা।

বন্ধ হয়ে যাওয়া প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকমের (সিটিসেল) বকেয়া ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকা। টেলিটকের কাছে বকেয়া ১ হাজার ৬৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। টেলিটকের বকেয়ার মধ্যে থ্রিজি স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ইকুইটিতে কনভার্সনের ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। গ্রামীণফোন, রবি ও সিটিসেলের বকেয়া নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার জানান, ২০১২ সালে দেশে মোবাইল গ্রাহক ছিল ৮ কোটি ৬৬ লাখ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৮ কোটি ৩৪ লাখ। ওই সময় দেশে থ্রিজি ও ফোরজি সেবা ছিল না। বর্তমানে থ্রিজি গ্রাহক ৩ কোটি ১৯ লাখ ও ফোরজি ৭ কোটি ৫৪ লাখ।

মন্ত্রী আরো জানান, ২০১২ সালে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ২ কোটি ৮৯ লাখ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১২ কোটি ৪২ লাখ। ২০১২ সালে দেশে টেলিডেনসিটি ছিল ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ, এখন তা ১০৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ইন্টারনেট ডেনসিটি ছিল ১৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ, এখন যা বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোনে কল ড্রপ ও নেটওয়ার্কের সমস্যা একটি বড় সংকট। এমন কেউ নেই যিনি কল ড্রপের শিকার হননি। অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সত্যিকার অর্থেই এটি বড় সমস্যা। তিনি বলেন, ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গ্রামীণফোনের গ্রাহক আট কোটির বেশি, রবির গ্রাহক পাঁচ কোটির বেশি। গ্রাহক অনুযায়ী অপারেটরগুলোর যে পরিমাণ বেতার তরঙ্গ নেয়া দরকার, তার তিন ভাগের এক ভাগও তারা নেয়নি। সরকারের চাপে গত মার্চে তরঙ্গ বাড়িয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ তরঙ্গ সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ করা হলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে।

এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো তরঙ্গ সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া বা জরিমানা করার সুযোগ আছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সমস্যা হলো জরিমানা বা কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলে অপারেটরগুলো আদালতের দ্বারস্থ হয়। মোবাইল ফোনের কলরেট বিষয়ে সরকারি দলের সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা

জব্বার বলেন, গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার বেশি থাকায় সব অপারেটরের একই কলরেট নির্ধারণ করা হলে গ্রামীণফোনের সেবার প্রতি গ্রাহক আকর্ষণ বেড়ে যাবে। ফলে তার মার্কেট শেয়ার আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ অবস্থায় ছোট অপারেটরদের মার্কেটের অবস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। সে কারণেই সবার জন্য সমান কলরেট, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close