ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আগামী ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার বয়সসীমা ২৯ থাকবে কি না তা নিয়ে এখন বড় আলোচনা সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ বয়সসীমা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে পরবর্তী কমিটি থেকে বাদ পড়বেন আলোচিত একাধিক পদপ্রত্যাশী নেতা। বয়সসীমা শিথিল করা হবে কি না তা নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও খোলাসা করে কিছু বলতে পারেননি।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ৫(ক) ধারায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বয়স ২৭ বছর নির্ধারণ করা আছে। তবে বিগত সম্মেলনগুলোতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিশেষ বিবেচনায় এই বয়সসীমা নির্ধারণ করেছিলেন ২৯ বছর। এবারের কভিড পরিস্থিতি এবং দীর্ঘ সাড়ে চার বছর সম্মেলন না হওয়ার ফলে বয়সসীমা শিথিলের দাবি তুলেছেন কেন্দ্রীয় অনেক নেতা।
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি দুই বছর পর এ সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু গত সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের কোনো সম্মেলন হয়নি। ফলে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতারই বয়সসীমা ২৯ ছাড়িয়ে গেছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, যে কয়েকজন অভিজ্ঞ নেতা আগামী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আলোচনায় রয়েছেন তাঁদের সবার বয়সই ২৯ পেরিয়ে গেছে। ফলে বয়সসীমা শিথিল করা না হলে বিগত কমিটির মতো এবারও কম অভিজ্ঞ নেতৃত্ব পাবে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা চার আওয়ামী লীগ নেতার একজন হলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ছাত্রলীগের বয়সসীমা কী হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সম্মেলনের দিনই এ সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
শীর্ষ দুই পদে আলোচনায় যাঁরা
ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে আঞ্চলিকতা একটা প্রভাব ফেলে। একই বিভাগ বা জেলা থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয় না। ফলে সম্মেলন সামনে এলে পদপ্রত্যাশী নেতাদের কার বাড়ি কোন জেলায় তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এবারের সম্মেলন ঘিরেও পদপ্রত্যাশী নেতাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। অন্তত ২০ জন নেতার সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। তিনি বিপুল ভোটে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড়ে। আলোচনায় থাকা আরেক নেতা হলেন ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু। রংপুরের এই নেতা ছাত্রলীগের একাধিক প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা বরিশাল বিভাগের চার নেতা আলোচনায় রয়েছেন। তাঁরা হলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপসম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ছাত্রলীগের বিগত কমিটির গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপসম্পাদক এবং বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তাঁর বাবা প্রয়াত শেখ আব্দুর রব ১৯৭০-৭১ সালে বৃহত্তর বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কর্মসংস্থান বিষয়ক উপসম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় বিগত কমিটির সহসম্পাদক।
চট্টগ্রাম বিভাগের ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে বিশেষ আলোচনা রয়েছে। তাঁরা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের ও উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে এবার আলোচনায় আছেন দুই ছাত্রলীগ নেতা। তাঁরা হলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস।
ফরিদপুর অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত। তিনি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ফরিদপুরের আরেক নেতা ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক রনি মুহম্মদও আলোচনায় রয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগ থেকে পদপ্রত্যাশী নেতারা হলেন ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারী, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু হাসনাত হিমেল, উপদপ্তর সম্পাদক ও ঢাবি অমর একুশে হল ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী সম্মেলন সামনে রেখে সংগঠনের অন্তত তিনজন নারী নেতা আলোচনায় রয়েছেন। তাঁরা হলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা সিকদার ও ফরিদা পারভীন এবং বেনজীর হোসেন নিশি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচিতে সামনের সারিতে থেকেই অংশ নিচ্ছেন।