করোনাদেশজুড়েশিক্ষা-সাহিত্য
সনাতন ধর্মাবলম্বী হয়েও ইফতার বিতরণ করে অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনা চর্চা বজায় রাখার এবারও প্রমাণ দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা সিকদার। সনাতন ধর্মাবলম্বী হয়েও করোনার কারণে সকল দোকানপাট বন্ধ থাকায় ভাসমান মানুষের কথা চিন্তা করে প্রথম রমজানের দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিন বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নিজ হাতে তৈরি করা ইফতার বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
ছাত্রলীগ নেত্রীর এমন মানবিক উদ্যোগকে সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছেন সচেতন নগরবাসী। তিলোত্তমা শিকদার সকলের পরিচিত মুখ। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সবাই তাকে চেনেন। তিনি ডাকসুর সদস্যও। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পাশাপাশি ডাকসুর নেত্রী হওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় আলোচনায় ছিলেন।
এবারের রমজান মাসে অন্যরকম এক মানবিক উদ্যোগ নিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। থাকেন কবি সুফিয়া কামাল হলে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন ঘোষণার চারদিন আগে তিনি চলে যান নিজ শহর বরিশালে। ভাবতে পারেননি এতদিন লকডাউন থাকবে; তাই চাইলেও তিনি এখন ঢাকায় আসতে পারছেন না।
এরইমধ্যে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। লকডাউনে নিন্মআয়ের অনেক মানুষ সেহরি না খেয়েই রোজা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। অনিশ্চিত তাদের ইফতারের আয়োজন। সনাতন সম্প্রদায়ের হয়েও শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনা চর্চায় ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাসের ন্যায় প্রথম রমজান থেকে শুরু করে অদ্যাবধি এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার।
নিজের বাসায় নিজহাতে তিনি রান্না শুরু করেছেন ইফতার সামগ্রী। বাসায় তৈরি করা ইফতার সামগ্রী নিয়ে বিকেলেই তিনি ছুটে চলেছেন বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায়। দ্বিতীয় রমজানের দিন প্রচ- বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ভাসমান ও শ্রমজীবী মানুষের হাতে তিনি নিজ হাতে তৈরি করা ইফতার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। তার এই ইফতার আয়োজন চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত।
ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার বলেন, করোনার মধ্যে এবারের রমজান আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন। এ অবস্থায় করোনার সঙ্কটের কারণে অনেকের বাসায় ইফতারের ব্যবস্থা নেই। লকডাউনের কারণে আগের মতো রাস্তাঘাটে ইফতারের কোন দোকানও বসেনি। তাই বরিশাল নগরীর ভাসমান ও শ্রমজীবী মানুষের ইফতারের কোন ব্যবস্থা নেই। এ কারণেই প্রথম রমজান থেকে আমি নিজ হাতে বাসায় ইফতার তৈরি করে রাস্তায় বের হয়েছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করছি। তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশ কোন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রীস্টানদের নয়; এটা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। ছাত্রলীগের সেই চেতনা চর্চা থেকেই আমার সামর্থ্য অনুযায়ী এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
সূত্রমতে, শুধু ইফতার সামগ্রী বিতরণই নয়; লকডাউনের কারণে বিপদেপড়া শিক্ষার্থীদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিলোত্তমা শিকদার। ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা লকডাউনের কারণে প্রাইভেট কিংবা বিকল্প আয়ের পথ হারিয়ে বিপদে পড়েছেন তাদের নাম সংগ্রহ করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি। নিজ হল এবং আশপাশে যারা বিভিন্ন বাসায় আটকে পড়েছেন, তাদের জন্য ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই লিটার তেল ও আটা উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছেন তিলোত্তমা। ফোনে এবং বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে ঢাকায় থাকা ছাত্রলীগের দুই সহকর্মীর মাধ্যমে এসব উপহার সামগ্রী ক্রয় করে তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীদের বাসায়। ইতোমধ্যে ২১ জন ছাত্রী এবং ১১ জন ছাত্রকে দুই হাজার টাকা করে বিকাশে পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার।
তিলোত্তমা বলেন, ভেবেছিলাম ঢাকায় ফিরব। কিন্তু লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছি। আটকা পড়লেও সহপাঠী, ছোট ভাই ও বোনদের বিপদে পাশে আছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাইলে সবসময় মানুষের পাশে থাকা যায়। এজন্য মানবিক হওয়া জরুরী।
/আরএম