দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
সদস্য ছাড়া অন্য কারখানার দায়িত্ব নেবে না বিজিএমইএ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: তৈরি পোশাক খাতে নিজেদের সদস্য ছাড়া অন্য কারখানার দায়িত্ব নেবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। একই সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সদস্য সহযোগিতা চাইলে বা অভিযোগ উত্থাপন করলে সর্বাত্মক সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোশাক খাতের এ প্রতিষ্ঠান। গতকাল বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়।
দেশের পোশাক খাতের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কারখানাগুলো রানা প্লাজা ধসের পর হওয়া তদন্তের বাইরে থেকে যায়। রানা প্লাজা ধসের পর অন্তত সাড়ে তিন হাজার কারখানা পশ্চিমা ক্রেতা একড অ্যান্ড অ্যালায়েন্স ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তত্ত্বাবধানে পরিদর্শন করে। এসব প্রতিষ্ঠানই বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য। প্রতিষ্ঠান দুটির সদস্য নয় এমন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ করানো, অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকা, নিয়ম বহির্ভূত অবকাঠামোয় কারখানা পরিচালনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দেশে মোট তৈরি পোশাকের ৩ হাজার ৮৬১টি সক্রিয় কারখানার মধ্যে অপরিকল্পিত এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ১০৪টি বলে জানিয়েছে ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি)। এসব কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার। যার মধ্যে ৫৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী এবং ৪০ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ কর্মী। এসব প্রতিষ্ঠান কখনো সরকার বা ক্রেতারা পরিদর্শন করেন না। ফলে এসব কারখানায় অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও নেয়া হয় না।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, অনেক সময় সাব-কন্ট্রাক্টের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। পণ্য ঠিকমতো দেয়া হয় না, মান ঠিক নেই। কিন্তু আমাদের যারা সদস্য না, তাদের বিষয়ে আমরা কোনো দায়িত্ব নিতে পারব না। তাই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সাব-কন্ট্রাক্টিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার তাগিদে শিল্পটির জন্য ‘সাব-কন্ট্রাক্টিং গাইডলাইন-২০১৯’ চূড়ান্ত করে সরকার। এ নীতিমালা অনুযায়ী, রফতানিমুখী পোশাক খাতের কারখানাগুলোর জন্য অননুমোদিত সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের সুযোগ আর থাকছে না। সাব-কন্ট্রাক্টিং কার্যক্রমে যুক্ত হতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য হতে হবে। পাশাপাশি সাব-কন্ট্রাক্টিং তদারকি বা নিয়ন্ত্রণে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের এ দুই সংগঠনের ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে নীতিমালায়।
আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সংঘটিত এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ১১২ শ্রমিক। ঘটনার পর জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সাব-কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের জন্য পোশাক তৈরি করত। ওই সময় সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের জন্য সমন্বিত ও স্বীকৃত কোনো দিকনির্দেশনা বা নীতিমালা ছিল না। ফলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে কারখানার কর্মপরিবেশ তদারকিরও কোনো সুযোগ ছিল না। তাজরীনের ঘটনার পর পরই ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার (ন্যাপ) আওতায় এ-সংক্রান্ত নীতিমালা বা গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও ইপিবিকে নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ছয় বছর পর সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে শিল্পটির জন্য সাব-কন্ট্রাক্টিং গাইডলাইন-২০১৯ চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কারখানাগুলোর সবক’টিই সাব-কন্ট্রাক্টিং পদ্ধতিতে কাজ করে। নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এখন থেকে আর এসব কারখানার সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা কাজ করছেন, তাদের কোনো অভিযোগ বা আপত্তির বিষয়ে কোনো দায় নেবে না বিজিএমইএ।