দেশজুড়ে
শীর্ষ দূষিত নদীর অবস্থানে বুড়িগঙ্গা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাজধানীর গৃহস্থালি ও পয়োবর্জ্যের গন্তব্য। শিল্পবর্জ্যেরও অন্যতম আধার। এসব নিয়ে অনেকদিন ধরেই দেশের সবচেয়ে দূষিত নদী ঢাকার বুড়িগঙ্গা। শুধু দেশের নয়, সারা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০ নদীরও অন্যতম এ বুড়িগঙ্গা।
পরিবেশ ইস্যুতে কাজ করা কনজার্ভ এনার্জি ফিউচারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর মধ্যে ঢাকার এ নদীটির অবস্থান পঞ্চম।
বুড়িগঙ্গার পানির দূষণমাত্রা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন সৃষ্ট পয়োবর্জ্যের পরিমাণ ১৩ লাখ ঘনমিটার। এর মধ্যে পাগলা পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা হচ্ছে। বাকি ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। একসময় হাজারীবাগের ট্যানারি বর্জ্যও মিশত বুড়িগঙ্গাতেই। আর বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা টেক্সটাইল কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানার ৯০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য প্রতিদিন নদীটিতে পড়ছে। ১৭৮টি নালামুখ দিয়ে এসব বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশছে।
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ রোধে আদালতের নির্দেশ, একাধিকবার জরিমানা—নানা ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শিল্প-কলকারখানাগুলোকে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও নদীদূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। চালু করানো যাচ্ছে না এ কারখানাগুলোর ইটিপি।
কনজার্ভ এনার্জি ফিউচারের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত নদীর তালিকায় সবার উপরে আছে ভারতের গঙ্গা। দ্বিতীয় শীর্ষ নদীটি ইন্দোনেশিয়ার সিতারাম। তৃতীয় শীর্ষ নদী চীনের ইয়েলো। এরপর শীর্ষ দূষিত নদীটি ইউরোপে। ইতালির সারনো নদী রয়েছে সবচেয়ে দূষিত নদীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে। আর পঞ্চম শীর্ষ দূষিত নদীটি ঢাকার বুড়িগঙ্গা। যদিও ২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ দূষিত নদীগুলোর তালিকায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা ছিল ষষ্ঠ স্থানে।
শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকার চারপাশের অন্য নদীগুলোর দূষণও মাত্রা ছাড়াচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীতীরবর্তী এলাকায় স্থাপিত কারখানাগুলোর বেশির ভাগেরই বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা (ইটিপি) নেই। এসব কারখানা নদীতেই সরাসরি বর্জ্য ফেলছে। আর যেসব কারখানায় ইটিপি রয়েছে, তাদেরও অনেকেই তা ব্যবহার করছে না। ফলে পরিশোধন ছাড়াই বর্জ্য নদীতে ফেলছে এসব কারখানাও। বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) মাধ্যমে করা পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীগুলোয় প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার টন বর্জ্য ও ৫৭ লাখ গ্যালন দূষিত পানি মিশছে।
দূষণের পাশাপাশি দখলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পদক্ষেপ জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল ইসলাম সংবাদমাধ্যমে বলেন, এজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা বা নৌযান কিংবা অন্য যারাই নদী দূষণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদও করা হয়েছে। নদীতীরে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেগুলোও আমরা অভিযান চালিয়ে ভেঙে ফেলছি। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম আমরা আরো জোরদার করব। প্রয়োজনে নদী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হবে।