প্রধান শিরোনামস্বাস্থ্য

শীঘ্রই ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগঃ মহাপরিচালক

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জনবলের ঘাটতি অনেক আগে থেকেই।  এই সংকট মেটাতে খুব দ্রুতই প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) ‘ডেঙ্গু অভিজ্ঞতা শেয়ারিং’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।  কর্মশালাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি ছিল না বললে ভুল হবে। তবে এবার এতো বেশি আকার ধারণ করবে এটা ধারণার বাইরে ছিল।  প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকেই। সবসময় সব প্রত্যাশা পূরণ হয় না। আমরাও এর বাইরে না। একইভাবে হাসপাতালগুলোরও অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তাদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে।

ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের জনবলের কিছু ঘাটতি রয়েছে। ফলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। এটা সম্পন্ন হলে আমাদের ঘাটতি কিছুটা কমবে তাবে পুরোপুরি নয়। গত ৩৯ তম বিসিএস থেকে আমাদের জন্য ২ হাজার ডাক্তার দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সে সময় দেয়া হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কেননা দিনরাত এক করে আমাদের সহকর্মীরা কাজ করেছে। যখন আমরা ডেঙ্গু টেস্ট সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ঘোষণা করার পর হঠাৎ করেই আমাদের কিট সংকট দেখা দিলো। এই কিট আনার জন্য আমাদের নিজেদের সীমান্তসহ ভারত ও অন্যান্য সীমান্তেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

তিনি বলেন, এবছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পর আগামী বছরে আর ডেঙ্গু হবে না এমনটা ভাবার কোনও দরকার নেই। আগামী বছরও ডেঙ্গু হবে। তবে এমন ভয়াবহভাবে হবে না। কারণ মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন হয়েছে।  এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্টরাও সতর্ক হয়েছেন।

চলতি বছর বিশ্বের ১২৭টি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় জানিয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশসহ কোনো দেশ আগে থেকে বুঝতে পারেনি ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এতটা বাড়বে। তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এ বছর শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল।

ডেঙ্গুতে একজন মানুষের মৃত্যুও কাম্য নয় মন্তব্য করে মহাপরিচালক বলেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ডেঙ্গুতে মৃতের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা অনেক কম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তদের মধ্যে এক শতাংশের নিচে মৃত্যুবরণ করলে তা সহনীয় বলে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে মৃত্যু হার দশমিক ২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে সারাদেশের ডেঙ্গুর চিত্র তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ‘স্যাম্পল কালেকশনের  মাধ্যমে যাদেরকে সাসপেক্টেড ডেঙ্গু ধরা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ যেকোনও ভাবে তারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ’

তিনি আইইডিসিআরের করা কয়েকটি জরিপের তথ্য তুলে ধরেন এই অনুষ্ঠানে। তনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল। ’

এ মাসের সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখের তথ্য অনুযায়ী, ৩২ হাজার ৬৮১ জন আক্রান্ত রোগীর ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা বরিশালে।

মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, জুলাই মাসের ৩য় সপ্তাহে ঢাকার বাইরে মাত্র ১৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছিল। চট্টগ্রামে তখন অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি ছিল।  এরপরের সপ্তাহে দেখা গিয়েছিল আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ছে। বেশকিছু অঞ্চলে দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। ’

তিনি বলেন, ‘এর পরের সপ্তাহে অর্থাৎ আগস্টের প্রথমে দেখা গেল যে আগের চেয়ে অনেক বাড়তে শুরু করেছে। নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে। এ সময় খুলনা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি বরিশালে মারাত্মক আকারে বাড়তে শুরু করে।  এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে গভীরভাবে আমরা এ অঞ্চলে বেশি নকজরদারি বাড়ালাম।’

‘আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখলাম যে, বরিশালের পাশাপাশি খুলনা ও অন্যান্য অঞ্চলে বাড়ছে। কেননা এ সময়টা ছিল ঈদের ছুটি। ফলে ঢাকা থেকে অনেক মানুষ গ্রামে যেয়ে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এসময়ে ঢাকায় কিছুটা চাপ কমেছিল তবে পুরোপুরি না।’

আইইডিসিআরের পরিচালক  বলেন, ‘আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে আবার মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করলো এবং কিছু অঞ্চলে কমতে শরু করলো। পরে চতুর্থ সপ্তাহে দেখা গেছে বরিশালের পাশাপাশি যশোরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। যেটা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এমনকি এখন পর্যন্ত প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে। ’

আর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন তুলনামূলক অনেক কম বলে জানান তিনি। তবে কিছু এলাকায় এখনও খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই দেখেছি যে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা সবসময় বেশি। আইইডিসিআরের কাছে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বয়স এবং নারী-পুরুষের ব্যবধানের ওপর আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮ হাজার ১৬১ জনের সঠিক তথ্যের ওপর এ জরিপটি করা হয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৩ শতাংশ রোগী পুরুষ এবং ৩৭ শতাংশ নারী।

এছাড়া ২৬ হাজার ৫০৯ জনের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে পুরুষরা। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যাই বেশি। অর্থাৎ প্রায় ২৮ শতাংশ রোগী ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী। ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষরা আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। আর প্রায় ১৭ শতাংশ পুরুষের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছর।

আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ শতাংশ এবং ৬৮ শতাংশ রোগী ১৮ বছর বয়সের বেশি।

ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমাদের কাছে সরাসরি আসা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সি পুরুষেরা কর্মক্ষেত্রসহ সকল স্থানেই সক্রিয় থাকে। এরাই মূলত বাইরে বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের গবেষণা দেখা গেছে যে, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তারা, যারা কর্মক্ষেত্রে বা বাইরে কাজ করে থাকে এবং যারা ছাত্র।’

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close