দেশজুড়ে

শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে সহকর্মীদের শোক বার্তা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: গতকাল শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে সমাপ্তি ঘটল একটি অধ্যায়ের। আজম খান, লাকী আখন্দ, আইয়ুব বাচ্চুর পর বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে বড় ধাক্কা শাফিন আহমেদের মৃত্যু। বাংলা পপসংগীতে শাফিন আহমেদের তুলনা তিনি নিজেই। কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকার মৃত্যুতে শোকাহত গোটা দেশ।

শোকাহত সহকর্মী তারকারাও।
নকীব খান রেনেসাঁ বলেন, “তার মৃত্যু দেশের ব্যান্ড মিউজিক ও ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিরাট ক্ষতি। এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। ব্যান্ড মিউজিকে শাফিনের কন্ট্রিবিউশন অনেক।

সে নিজে গান লিখত, সুর করত, গাইত আবার মিউজিকও করত। তার মতো মিউজিশিয়ান খুব রেয়ার। ভালো গিটার বাজানো থেকে শুরু করে নেতৃত্বেও ছিল তুখোড়। আমাদের মাঝ থেকে এমন প্রতিভা চলে যাওয়া খুবই কষ্টের।

আমাদের একসঙ্গে অনেক স্মৃতি। স্টেজে অনেক গান করেছি আমরা।”
হাসান আর্ক বলেন, “শাফিন ভাই আমার খুব পছন্দের মানুষ ছিলেন। কলেজজীবনে মঞ্চে তাঁর গাওয়া গান করতাম। তাঁকে ফলো করতাম।

বাংলাদেশের ব্যান্ডে তাঁর মতো স্টাইলিশ মিউজিশিয়ান দ্বিতীয়টি নেই। আমরা তাঁর গায়কি ফলো করতাম, স্টেজে তাঁর পারফরম্যান্স খুব উপভোগ করতাম। অনেকবার সুযোগ হয়েছে তাঁর সঙ্গে একই স্টেজে বা একই অ্যালবামে গান করার। তিনি খুব স্নেহ করতেন আমাকে।”
গীতিকার-সুরকার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, “শাফিন ভাই আমার সুন্দরতম সহযাত্রী ছিলেন। আশির দশকের শেষের দিক থেকে ঘনিষ্ঠতা আমাদের। আমার সঙ্গে শাফিন ভাইয়ের প্রথম গান ছিল ‘প্রতি রাতই নির্ঘুম রাত’। এরপর একে একে এসেছে ‘কী করে সব ভুলে যাই’, ‘জন্মদিন তোমার’,

‘আমার রঙিন কতগুলো দিন’, ‘জীবনে কী পাব কী পাব না’র মতো গান। আমি তাঁর দুর্দান্ত গায়কি পছন্দ করতাম। দেড় মাস আগে শাফিন ভাইয়ের একটা মেসেজ পেলাম। পরে কল ব্যাক করলাম। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা টানা কথা হলো। গান নিয়ে, সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে সময় চলে গেল বুঝতে পারলাম না। আমি একটা মিক্সড অ্যালবাম করতে যাচ্ছি। সেখানে শাফিন ভাইয়ের গান রাখার পরিকল্পনা করেছিলাম। সম্প্রতি একজন ভাষাসৈনিককে নিয়ে গান তৈরি করছি। সেখানে অনেক শিল্পী গান করবেন। কথা ছিল শাফিন ভাই ও হামিন ভাই একসঙ্গে গাইবেন। সেটা আর হলো না। আজ শাফিন ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কত স্মৃতি, কত গল্প—সব মনে পড়ছে।”

শাফিন আহমেদের ভাই হামিন আহমেদ বলেন, “আমি সন্ধ্যার ফ্লাইটে [বৃহস্পতিবার] যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দেব। সেখানে আমাদের কাজিনরা থাকে। তারাই আছে শাফিনের সঙ্গে। যত দ্রুত সম্ভব লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করব। এই সময়ে ভাইকে নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন সহকর্মীরা।

ফেসবুকে জেমস বলেন, “বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিকের অন্যতম কিংবদন্তি ‘মাইলস’-এর সাবেক ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট শাফিন আহমেদ ভাই আমেরিকায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলা ব্যান্ড সংগীতে শাফিন ভাইয়ের অবদান অনেক। আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।

চিরকুটের পক্ষ থেকে বলা হয়, “চলে গেলেন ‘মাইলস’ ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ ভাই। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসিব করুন।

রুমানা মোর্শেদ বলেন, ‘এভাবে চলে গেলেন শাফিন ভাই!’

পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘শাফিন আহমেদ স্যার! শান্তিতে থাকুন কিংবদন্তি। একটি যুগের সমাপ্তি।’

মিফতাহ জামান বলেন, ‘এমন এক বেদনার্ত সময়ে আপনার বিদায়ের খবর শাফিন ভাই!’

ইমরান মাহমুদুল নিজের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই পোস্ট লেখার সময় এখনো আমার হাত কাঁপছে! ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছি আর মনে পড়ছে আমার ‘অধরায় আরেকবার’ কনসার্টে তাঁর বলে যাওয়া কথাগুলো। মাত্র ২০ দিন আগেই তাঁর সামনে পারফরম করেছি। আর এখন তাঁর মৃত্যুর খবর পেলাম, এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। তাঁর উপস্থিতি ছিল আমার জন্য অনুপ্রেরণার। তাঁর গান ছিল উপহার, স্মৃতিগুলো আশীর্বাদ। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।’

আশি ও নব্বইয়ের দশকে তুমুল জনপ্রিয় ছিল ব্যান্ড সংগীত। উচ্চারণ, ফিলিংস (নগর বাউল), এলআরবির সঙ্গে আরো একটি নাম সে সময় বেশ শোনা যেত, তা হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদের মাইলস। সত্তরের দশকের শেষদিকে মাইলস প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যান্ডটি বিভিন্ন জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে। হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ, মানাম আহমেদ প্রমুখ ছিলেন এই ব্যান্ডের প্রাণ। এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। কণ্ঠের পাশাপাশি শাফিন ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close