দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

লাখ লাখ ব্যবসায়ী বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক : ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ফাঁকি ও বকেয়া নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার কাছে একটি বিশেষ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এতে ভ্যাট ফাঁকিতে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ ৬টি সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। ভ্যাটের আওতাযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিকস ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবহারে বাধ্য করারও সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ভ্যাট ফাঁকিতে যেসব কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। মাঠ পর্যায়ে করা এই প্রতিবেদনে এ ছাড়া আরও পাঁচটি সুপারিশ করেছে গোয়েন্দারা। সুপারিশগুলো হলো ভ্যাটের আওতাযোগ্য সব দোকান মালিকের ভ্যাট নিবন্ধন নিশ্চিত করা, এনবিআরের ভ্যাট আদায়ের প্রক্রিয়া সফটওয়্যারভিত্তিক ও স্বয়ংক্রিয় করা, এনবিআর কর্তৃক সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানে ইএফডি সরবরাহ নিশ্চিত করে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারে বাধ্য করা, যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে থাকা ভ্যাট আদায়ে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রয়োজনে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিটি ভ্যাট কমিশনারেটে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনে ভ্যাট ফাঁকির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, শুধু ঢাকায় বড় বড় দোকান ব্যবসায়ী আছেন ৬ থেকে ৭ লাখ। এসব দোকানের দৈনিক লেনদেন লাখ টাকার বেশি। এ ধরনের ব্যবসায়ী চট্টগ্রামে ৪ লাখ, খুলনায় ২ লাখ ও রাজশাহীতে লাখের বেশি। এ ছাড়া জেলা শহরগুলোতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার দোকান ব্যবসায়ী রয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে এক থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত এ ধরনের দোকান ব্যবসায়ী রয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। দেশে ২০ লাখেরও বেশি ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হচ্ছে না। আর এনবিআর কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে না পারার কারণে বড় অংকের ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন লাখ লাখ ব্যবসায়ী। আর হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেশে প্রতি ৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটির ভ্যাট নিবন্ধন নেই। আর ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের জরিপে দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ দোকান ভ্যাটের আওতায় আসে নাই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভ্যাট আইনে সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় কোনো ব্যবসা চালু করতে হলে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। ব্যবসা শুরুর অন্তত ১৫ দিন আগে এনবিআর থেকে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিন) নিতে হবে; কিন্তু সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাখ লাখ দোকান মালিক ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর ভ্যাট ফাঁকি রোধে এই প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে জাপানের পিওএস সিস্টেম বা পয়েন্ট অব সেল নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা বলা হয়েছে। জাপানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি দেওয়া একটি গুরুতর অপরাধ। কর ফাঁকি ধরা পড়লে আয় পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয় বলেও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close