স্বাস্থ্য

লবণ-পানিতে গার্গেল করলেই ঠেকানো যাবে করোনা বলছে গবেষণা!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ গলা ব্যথা কিংবা খুশখুশে কাশি হলে অনেকেই ভরসা লবণ মিশ্রিত গরম পানিতে। এই পানি দিয়ে গার্গেল করলে মুহূর্তেই ফলাফল মেলে। এই বিষয়টির সঙ্গে বিশেষজ্ঞরাও একমত। করোনা ঠেকাতে এই লবণ পানির বিকল্প নেই।

দিনকেদিন করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ দিকে মোড় নিচ্ছে। কোভিড ১৯ ব্যাধির দাপট কমার কোনো লক্ষণই নেই বরং বাড়ছে। অন্যদিকে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিষেধক তৈরিতে ব্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।

এরই মধ্যে একটি গবেষণা বলছে, শুধু লবণ পানিতে গার্গেল করে কোভিড ১৯ মারাত্মক সংক্রমণ রুখে দেয়া যেতে পারে। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি প্রমাণ করেছেন, গরম পানি ও লবণে গার্গেল করে কোভিড ১৯ সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত ঠেকিয়ে দেয়া যায়।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান প্রোফেসর আজিজ শেখ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অন্য আর একটি করোনা গ্রুপের ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি ও তার সহযোগীরা নিশ্চিত হয়েছেন গরম স্যালাইন ওয়াটারে গার্গেল করলে কোভিড ১৯ ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আটকে দেয়া গিয়েছে, বলছে গবেষণা।

এলভিস (এডিনবার্গ অ্যান্ড লথিয়ানস ভাইরাল ইন্টারভেশন স্টাডি) নামক এই গবেষণায় দেখা গেছে, লবষ মেশানো গরম পানি শরীরের ইনেট ইমিউনিটি বাড়িয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

কোভিড ১৯ আরএনএ ভাইরাসের ওপরে এক প্রোটিনের চাদর থাকে। সাবান, স্যানিটাইজার সেই প্রোটিন নষ্ট করে দিয়ে ভাইরাসকে অকেজো করে দেয়। মুখে, চোখে বা গলার মধ্যে তো সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না! সাবান স্যানিটাইজারের মতোই ভূমিকা নেয় লবণ পানি।

এই পানি দিয়ে গার্গেল করলে করোনা ভাইরাসের প্রোটিনের আচ্ছাদন সরে গিয়ে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। কোভিড ১৯ ছাড়াও সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দায়ী ভাইরাসেরাও গরম পানিতে জব্দ হয়। নভেল করোনাভাইরাস চোখ আর নাক দিয়েও শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

তবে লাইপোজাইম নামে এক বিশেষ প্রোটিওলাইটিক এনজাইম চোখের জলে ও নাকের মধ্যে থাকায় সেখানে ভাইরাস সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। তাই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে গরম জলের গার্গল করার কোনো বিকল্প নেই।

এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর আজিজ শেখ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যারা এরই মধ্যে কোভিড ১৯ এর সংক্রমণে ভুগছেন তাদের রোগের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার গরম স্যালাইন ওয়াটারে গার্গল করা দরকার। এর ফলে ভাইরাস লোড অনেকটা কমে যায়।

এতে শ্বাসনালি বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। গবেষণায় প্রমাণিত শ্বাসনালির উপরের স্তরের কিছু কোষ স্যালাইন ওয়াটারের লবণ থেকে হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড তৈরি করে। এটিই কোভিড ১৯ ভাইরাসের প্রোটিনের আবরণ ধ্বংস করে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে।

এই সময় যারা নিয়ম করে গণপরিহন ব্যবহার করছেন তাদেরকেও নিয়মিত লবণ পানিতে গার্গেল করার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতীয় নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-

> সম্ভব হলে অফিসে পৌঁছে একবার গার্গেল করে নিন।

> শুধু গার্গল করলে চলবে না। মুখে সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরে (নাকের নিচে নয়), চশমা বা জিরো পাওয়ারের গ্লাসে চোখ ঢেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিত।

> টি-জোন অর্থাৎ চোখ, নাক, মুখে অকারণে হাত দেবেন না।

> খাবার আগে তো বটেই বাইরে বেরোলে অফিস বা বাড়িতে পৌঁছে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরামর্শ, কোভিড আক্রান্তদের স্যালাইন ওয়াটারে একাধিকবার গার্গল করালে রোগ ঠেকানোর পাশাপাশি তা ছড়িয়ে পড়াও অনেকটা কমানো যায়।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close