দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
রোহিঙ্গাদের সমাবেশ: বাংলাদেশের প্রতি ‘ঋণী’, আন্তর্জাতিক সহায়তায় ফিরতে চান
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক:‘ক্যাম্পে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব। তবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে আসেননি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের জমি, ঘর এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আমরা তাদের প্রতি আজীবন ঋণী।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে শরণার্থী জীবনকে খাঁচার পাখির বন্দি জীবনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের দাবি, মিয়ানমারের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর ইস্ট ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুব সংগঠন ‘ইসলামি মাহাসা’র উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা এ কথা বলেন। সমাবেশে প্রায় লাখের কাছাকাছি বিভিন্ন বয়সি রোহিঙ্গা উপস্থিত হন।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা জোরদার করার দাবি জানিয়ে দ্রুত নিজ দেশে ফেরার স্লোগান দেন।
রোহিঙ্গা নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে। মিয়ানমার সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নিলে আমরা ফিরে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাখাইনে আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এর আগে জান্তা সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার সঠিক বিচার এখনও হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।’
ডা. জোবায়ের উল্লেখ করেন, ‘ক্যাম্পে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব। তবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে আসেননি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের জমি, ঘর এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আমরা তাদের প্রতি আজীবন ঋণী।’
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মাওলানা রাহমত করিম বলেন, ‘ক্যাম্পের এমন জরাজীর্ণ বন্দি জীবন মানবিক নয়। বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তবে বিশ্ববাসীর উচিত আমাদের দ্রুত ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা।’
সমাবেশে একাধিক রোহিঙ্গা আলেম ও যুবক বক্তব্য রাখেন। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমিন জানান, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রোহিঙ্গাদের গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কক্সবাজারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পগুলোতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অপরাধপ্রবণতা কমানোর লক্ষ্যে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকেরা সোমবার এ সমাবেশের অনুমতি নিয়েছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয় নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের কারণে আরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন।