দেশজুড়ে
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের অনিচ্ছা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরাতে এক বছর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের করা ত্রি-পক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ শেষের পথে। একই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিরও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার মতো রাখাইনে গত দুই বছরেও দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি ও আস্থা অর্জন করতে পারেনি মিয়ানমার। রাখাইনে অবস্থানরত হাজারো রোহিঙ্গাদের উপর এখনো অত্যাচার চালাচ্ছে মিয়ানমার। এছাড়া বাংলাদেশের প্রদত্ত ৩০ হাজারের তালিকা থেকে মাত্র ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হলেও এখনো কাউকেই ফিরত নিচ্ছে না মিয়ানমার।
এদিকে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে নানা প্রকারের অপকর্মে। বাংলাদেশের টেকনাফ, যেখানে সব চেয়ে বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। সেসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের ভিড়ে বাংলাদেশিরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। অপরদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের ৩০ টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘরে প্রতিদিন ৬০-৮০ শিশুর জন্ম হচ্ছে। গত ২০ মাসে নতুন করে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী সন্তানসম্ভবা। ফলে আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিভিন্ন সংস্থার জরিপ সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে সরকারি সংস্থার মতবিরোধ থাকলেও স্থানীয় সুশীল সমাজ,সচেতন মহলের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নিবন্ধনভুক্ত চার লাখ রোহিঙ্গা পরিবারে আরও এক লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে এদের মধ্যেও ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু-কিশোর রয়েছে। ফলে একটি দেশের জন্য তা উদ্বেগের। বাংলাদেশ থেকে এসব রোহিঙ্গাদের সরানো না গেলে চরম সংকটে পড়বে দেশটি। ফলে এ মুহূর্তে উচিত যেকোনো উপায়ে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নেপিডোর সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তিতে উল্লেখ ছিলো, ৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবার কথা ছিলো।’ তবে চুক্তির পর প্রায় দেড় বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেছে মিয়ানমার। এমন চলতে থাকলে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা যেভাবে বাংলাদেশে বংশ বিস্তার করছে, তাদের আর কখনোই ফিরিয়ে নেয়া যাবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।