ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রাণিজ আমিষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে অংশটি খাবার হিসেবে ব্যবহার হয় তার মধ্যে ডিম হচ্ছে অন্যতম। বড় সেদ্ধ ডিমে আছে ৭o ক্যালরি মান পুষ্টি। ৬ গ্রাম উচ্চ মানের প্রোটিন আছে। ডিমের সাদা অংশটুকু উচ্চ মানের জৈব আমিষ, আর কুসুমে স্নেহ পদার্থ, লৌহ ও ভিটামিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। কেননা ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আবার কুসুমে আছে ভিটামিন ডি, যা হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
সম্প্রতি একটি বিখ্যাত জার্নালে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে যা জানা গেছে তা বেজায় চমকপ্রদ। কয়েক হাজার মানুষের ওপর করা এই গবেষণাটিতে দেখা গেছে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটা বা দুটি ডিম খেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ছোট-বড় সব রোগই দূরে পালাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরো অনেক উপকারিতা। যেমন ধরুন…
১. চুল পড়ার হার কমে : নানা কারণে চুল পড়ার হার কি বেড়ে গেছে? তাহলে বন্ধু প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে একটা করে ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। আসলে ডিমের অন্দরে থাকা ভিটামিন এ ও ই এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই দুটি উপাদান চুলের গোড়ার পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। ফলে চুল পড়ার হার কমতে সময় লাগে না।
২. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায় : ডিমে রয়েছে লুয়েটিন এবং জিয়াক্সেনথিন নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আলট্রাভায়োলেট রশ্মির থেকে চোখকে রক্ষা করে। সেই সঙ্গে রেটিনার কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে ছানি সহ একাধিক চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পেতে শুরু করে।
৩. অ্যামাইনো অ্যাসিডের ঘাটতি দূর হয় : শরীরের সচলতা বজায় রাখতে নিয়মিত যে যে উপদানগুলির প্রয়োজন পরে অ্যামাইনো অ্যাসিড তার মধ্যে অন্যতম। আর ডিমে এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে আছে। তাই তো ব্রেকফাস্টের মেনুতে যদি ডিমের অন্তর্ভুক্তি ঘটে তাহলে শরীরের সুস্থতা নিয়ে কোনো চিন্তাই থাকে না।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে : ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, স্কিন এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় রয়েছে ডিমে। তাই একথা বলা যেতেই পারে যে প্রতিদিন একটা করে ডিম খেলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত উপকার পাওয়া যায়। এই পরিমাণ উপকারিতা আর কোনো খাবার থেকে পাওয়া যায় বলে তো মনে হয় না।
৫. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে : শরীরে হিমোগ্লবিনের মাত্রা কমতে থাকলে সাধারণত এমন ধরনের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তো দেহের অন্দরে যাতে এই উপাদানটির মাত্রা কখনো না কমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ডিম। কীভাবে? বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে সেদ্ধ ডিমে উপস্থিত আয়রন শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৬. ওজন কমে : একেবারে ঠিক শুনেছেন! ডিম খেলে ওজন বাড়ে না, বরং কমে। কীভাবে এমনটা হয় জানেন? সকাল সকাল ডিম খাওয়া মাত্র পেট ভরে যায় এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত ক্ষিদেই পায় না। ফলে চিপস, ভাজাভুজি খেয়ে পেট ভরানোর প্রয়োজন পরে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা সকাল সকাল শরীরের ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে দেয়, তাদের সারা দিনে বেশি বেশি করে ক্যালরি সমৃদ্ধি খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর একথা তো সকলেই জানেন যে ডিমে য়ে পরিমাণ ক্যালরি থাকে তা শরীরের প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়। ফলে দেহে চর্বি জমার সুযোগই তাকে না। তাই অতিরিক্ত ওজনের কারণে যদি আপনি চিন্তায় থাকেন, তাহলে কাল সকাল থেকেই একটা করে ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
৭. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে : অনেকেরই মনে করেন বেশি ডিম খেলে নাকি কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই ধরণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। কারণ একাধিক গবেষণায় একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ডিমে উপস্থিত ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল আসলে ভাল কোলেস্টেরলের পর্যাযে পরে। ফলে এটি শরীরের কোনো ক্ষতি তো করেই না, বরং উপকারে লাগে। তাই তো প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে ১টা করে ডিম খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে, ফলে কমতে থাকে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ। ৮.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: ডিমে উপস্থিত সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারীতাকে তো বাড়াই, সেই সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ যাতে টিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে সংক্রমণ এবং থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৯. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায় : ডিমে কোলিন নামে একটি এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্ট থাকে, যা ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার মস্তিষ্ক বেশি বেশি করে কাজ করা শুরু করলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি মনোযোগ এবং বুদ্ধির ধারও বাড়তে শুরু করে। এক কথায় মস্তিষ্ক কত সুন্দরভাবে কাজ করবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে কোলিনের উপর। সেই কারণেই তো এই উপাদনটির ঘাটতি দেখা দিলে ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমারস সহ একাধিক ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
১০. স্ট্রেসের প্রকোপ কমে : ডিমে উপস্থিত প্রায় ৯ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক বিশেষ এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এ হরমোনটি স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমিয়ে নিমেষে মন ভাল করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১১. হাড়কে শক্তপোক্ত করে : ভিটামিন ডি-তে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে নিয়মিত ডিম খেলে হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। সেইসঙ্গে এই উপাদানটি হজম ক্ষমতা এবং হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে সার্বিকভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
/এন এইচ