দেশজুড়ে
রেললাইনে তোলা জীবনের শেষ সেলফি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল ইমরান হোসেন (১৬)। তবে তার পরিকল্পনা ছিল বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর। সেই অনুযায়ী তারা পাঁচ বন্ধু নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে চলে এসেছিল রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায়। এখানে রেললাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ‘সেলফি’ তুলছিল তারা।
ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকায় ট্রেন আসার আওয়াজ তাদের কানে পৌঁছায়নি। শেষ পর্যন্ত যখন তারা বিপদের বিষয়টি বুঝতে পারে, তখন আর সময় ছিল না। মুহূর্তে ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে দুই বন্ধু।
রোববার সকালে এ ঘটনার পর তাদের দ্রুত নেওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বন্ধু আল রাফি চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর রাফির মোবাইল ফোনে রয়ে গেছে একসঙ্গে তোলা তাদের শেষ সেলফি।
ঢাকা রেলপথ থানা পুলিশের বিমানবন্দর ফাঁড়ির এসআই মহিউদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, নিহত ইমরান হোসেনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলা কান্দাইলের দক্ষিণ পাড়ায়। তার বাবার নাম শাহ আলম দেওয়ান। দুর্ঘটনায় আহত আল রাফি এখন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বাবার নাম কামাল মিয়া। তিনি বিদেশে থাকেন। ইমরান গোলা কান্দাইলের মুজিবুর রহমান ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। রাফি তার সহপাঠী।
ইমরানের চাচা আল-আমিন সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তার ভাতিজাসহ কয়েক কিশোর সকাল ১০টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার রেললাইনে যায়। সেখানে তারা নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছিল। ঘটনার আগে ইমরান ও রাফি রেললাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সময় ট্রেন চলে আসে। চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় তারা দুজন ছিটকে পড়ে মারাত্মক আহত হয়। আশেপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সকাল ১১টার দিকে ইমরানের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
স্থানীয়রা জানান, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় মাঝেমধ্যেই ট্রেনের ধাক্কায় বা ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই স্থানে রেললাইন অর্ধবৃত্তাকারে বাঁক নেওয়ায় অনেক সময় ট্রেন খুব কাছে চলে না আসা পর্যন্ত বোঝা যায় না। আর এমনিতেই রেললাইনের দু’ পাশের ব্যবসায়ীদের ডাক-হাঁক, পাশের রাস্তার যান চলাচল ও বিমান ওঠানামার শব্দে ট্রেনের আওয়াজ পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে রেললাইন পারাপার হওয়া পথচারীদের কেউ কেউ দুর্ঘটনায় হতাহত হন।
/আরএম