প্রধান শিরোনামব্যাংক-বীমাশিল্প-বানিজ্য

রেমিটেন্সে প্রণোদনা, ডলার-টাকার বিনিময়হার নির্ধারণের চিন্তা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ চ্যানেলে দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, তার সিংহভাই আসে বিভিন্ন রেমিট্যান্স কম্পানি ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে। এর বাইরে সুইফট ব্যবস্থায় সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু রেমিট্যান্স আসে। রেমিট্যান্স কম্পানি ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে প্রেরিত রেমিট্যান্স শুরু থেকেই টাকায় কনভার্ট হয়ে দেশে আসছে। কিন্তু রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে, সেখানে ডলারে হিসাবায়নের কথা বলা হয়েছে।

এতে নগদ প্রণোদনা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রতিটি রেমিট্যান্সের প্রণোদনা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে টাকাকে ফের ডলারে রূপান্তর করতে হচ্ছে। এতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যেমন ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে, তেমনি টাকা ও ডলার রেট ভিন্ন ভিন্ন হিসাবায়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভোগান্তিতে পড়ছেন সুবিধাভোগীরা। বিষয়টি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানোর পর নগদ প্রণোদনা হিসাবায়ন সঠিক ও সহজ করতে প্রেরিত রেমিট্যান্সের সীমা ডলারে হিসাবায়নের পরিবর্তে তার সমমূল্য টাকায় নির্ধারণের চিন্তা করা হচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা হিসাবায়নে নিয়ে ব্যাংকগুলোর সমস্যা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের পরিবর্তে টাকায় সীমা বেধে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব।

বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহী করতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য বাজেটে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সার্কুলার জারির প্রায় দুই মাস পর গত ৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রণোদনা অর্থ ছাড় করা হয়, যা গত ৭ অক্টোবর থেকে সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স টাকায় রূপান্তরিত হয়ে আসায় সেটা ফের ডলারে রূপান্তর করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ বিদ্যমান ব্যবস্থায় টাকা থেকে ডলারে রূপান্তর করে রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা হিসাবায়ন করতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের একদিকে বাড়তি শ্রম দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংক টু ব্যাংক প্রচলিত বাজার রেট ভিন্ন ভিন্ন হিসাব করায় সুবিধাভোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত ও ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, এ ধরনের সমস্যার উদ্ভব হতে পারে—এটি আগেই বুঝতে পেরেছিল ব্যাংকগুলো। সে অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে রয়েছে রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে টাকায় সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং বিদ্যমান সীমা আরো বাড়ানো যায় কি না সেটি বিবেচনায় নেওয়া।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ডিভিশনের প্রধান ও এসইভিপি বলেন, রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা হিসাবায়নে ১৫০০ ডলারের যে বিষয়টি আছে, সেটার পরিবর্তে আমরা তার সমমূল্য টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলাম। এই স্লাব এক লাখ ৩০ বা এক লাখ ৪০ হাজার টাকা হতে পারে। বর্তমান বাজার রেটে ১৫০০ ডলার (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৭০ পয়সা) টাকায় রূপান্তর করলে দাঁড়াবে এক লাখ ২৭ হাজার টাকার কিছু বেশি। এটা হলে হিসাবায়ন সঠিক ও সহজ হবে। বিপরীতে ঝামেলা ও ভোগান্তি দুই থাকবে। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরেন আমার ব্যাংকে একজন প্রবাসী ১৫০০ ডলার রেমিট্যান্সের সমমূল্য টাকয় কনভার্ট হয়ে এক লাখ ২৭ হাজার টাকা বেনিফিসিয়ারিকে দেওয়ার নির্দেশনা এলো। আমি সেটা ডলারে ফের কনভার্ট করে ১৫০০ ডলারই ধরলাম। কিন্তু অন্য ব্যাংকে আরেকজন প্রবাসী ১৫০০ ডলারের সমমূল্যের এক লাখ ২৭ হাজার টাকা পাঠাল। কিন্তু ডলারে ফের কনভার্টের কারণে সেটি ১৫০০ ডলারের বেশি হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে ওই প্রবাসীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে। অর্থাৎ দেখা গেল একই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে একজন সহজেই নগদ প্রণোদনা পাচ্ছে, আরেকজন ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়ছে। আবার কম বিনিময় হার ধরে হিসাবায়নের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ওই বৈঠকে ব্যাংকাররা ১৫০০ ডলারের সীমা বৃদ্ধিরও দাবি জানান।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close