দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

রাজধানীর বাইরে ৫৪টি কেমিক্যাল গুদামের অনুমোদন দিয়েছে সরকার

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: পুরান ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ৫৪টি কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) জায়গায় অস্থায়ী ভিত্তিতে গুদামগুলো নির্মাণ করা হবে।

এজন্য পরিকল্পনা কমিশনে ‘রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ’ নামে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৪৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এর আগে ঢাকার শ্যামপুরে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫৪টি গুদাম নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্যামপুর ও টঙ্গীতে গুদাম নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকায় রাসায়নিক গুদামগুলো খালি করে সেখানকার কেমিক্যাল অস্থায়ী ভিত্তিতে ওইসব গুদামে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস। বর্তমানে বিভিন্ন সুপারিশ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পুনরায় সেটি পরিকল্পনা কমিশনে এলেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিএসইসি।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। আশা করছি, আগামী একনেকেই এটি অনুমোদন পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী না হওয়া পর্যন্ত পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করার কাজ অনেকটাই সহজ হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পিইসি সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলো হল- প্রকল্পটির বিষয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত ইআইএন রিপোর্ট এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হবে। প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের সংস্থান রাখতে হবে। প্রকল্পের সব অঙ্গের ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রয় পদ্ধতি ও ক্রয় প্যাকেজের সংখ্যা, পরিমাণ নির্ধারণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল-২০১৮ অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া গুদাম নির্মাণের পদ্ধতিগত বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যথাযথ অনুমোদন নিতে হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে সম্মানী ভাতা বাবদ প্রস্তাবিত ১০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৬ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ৮ লাখ টাকার পরিবর্তে ৬ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন ব্যয়ের বিষয়ে সুপারিশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। বিসিআইসি’র আওতায় ঢাকার শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে গুদাম নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অনুমোদনের পর বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে রাসায়নিক দ্রব্যাদি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা. পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণভাবে সংরক্ষিত রাসায়নিক পদার্থগুলো দ্রুত স্থানান্তর নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের নিরাপদ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। চলতি মাস থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি গুদাম নির্মাণ করা হবে।

অন্যদিকে একই দিনে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয় বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা নামে একটি প্রকল্প। দুর্ঘটনা রোধসহ আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা গোডাউন অপসারণের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি বিসিক কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আবাসিক এলাকায় অবস্থিত সব ধরনের রাসায়নিক কারখানা গোডাউন স্থানান্তরের জন্য স্থাপনাধীন বিসিক কেমিক্যাল পল্লীটি আরও বড় পরিসরে এবং তুলনামূলক কম জনবহুল এলাকায় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেজন্য অনুমোদিত বিসিক কেমিক্যাল পল্লীটি ঢাকার কেরানীগঞ্জে স্থাপনের পরিবর্তে ঢাকা-দোহার সড়ক বরাবর মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার তুলসীখালী ব্রিজ সংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা নামক তিনটি মৌজায় মোট ৩১০ একর জমিতে স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close