খেলাধুলা
রবার্তো মানচিনি: চিরাচরিত স্টাইল থেকে ইতালিকে সরিয়ে আনার স্থপতি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ইংল্যান্ডের ৫৫ বছরের প্রতীক্ষা আর ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগানে চাপা পড়ে গিয়েছিল ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ইতালির ৫৩ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
এই সময়ের মধ্যে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছে আজ্জুরিরা। কিন্তু ১৯৫৮ সালের পর কেবল গত বিশ্বকাপেই যখন কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয় তারা, ঐতিহ্যগতভাবে ফুটবলিং নেশন হিসেবে ইতালির জন্য সেটা ছিল দারুণ এক লজ্জাজনক ব্যাপার। তাই ওয়েম্বলিতে বুকায়ো সাকার পেনাল্টি যখন রুখে দেন জিয়ানলুইজি ডোনারুমা, অশ্রু সংবরণ করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল ইস্পাত দৃঢ় নার্ভের ইতালিয়ান যোদ্ধাদের জন্যও।
রবার্তো মানচিনির আবেগও ধরা পড়ে গেছে এদিন। ২০১৮ সালের মে মাসে কিয়েল্লিনি, বোনুচ্চিদের দায়িত্ব নেয়া এই ইতালিয়ান ফুটবল রেনেসাঁর এই স্থপতি বলেছেন, আমরা যা করতে পেরেছি তা দেখে আর এই আবেগ আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। এসব কিছুই আমাদের করতে হয়েছে গেল ৩ বছরে, বিশেষ করে গত ৫০ দিনে।
২০১৭ সালে যখন নিশ্চিত হওয়া গেল যে পরের বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না ৪ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা, তখন নিশ্চয়ই তিন বছর পরের ওয়েম্বলির দৃশ্যগুলোকে অন্য ভূবনের কোনো রূপকথার মতই দূরের মনে হবার কথা।
কিন্তু ছাইভস্ম থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার গতিতে ইতালি দলটি এখন উড়ছে। টানা ম্যাচ জয়ে ব্রাজিল ও স্পেনের বিশ্বরেকর্ড থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে আছে ইতালি। আসছে ২ সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বুলগেরিয়ার সাথে এই রেকর্ডকে স্পর্শ করার সুযোগ পাবে বদলে যাওয়া এই ইতালি। এই দলের গোলকিপার ডোনারুমা তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলে ফেলেছেন ৩৪টি ম্যাচ, যার কোনোটিতেই তার হয়নি একাধিক গোল খাওয়ার অভিজ্ঞতা।
চিরাচরিত কাতেনাচ্চিও স্টাইল থেকেও ইতালিকে সরিয়ে এনেছেন মানচিনি। গতিময় আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়ায় ইনসিনিয়া, কিয়েজা, ভেরাত্তিরা। ইনসিনিয়া তো বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর বললেনই, ঘরের পাশে রাস্তায় ফুটবল খেলার আনন্দে খেলে এখন ইতালি জাতীয় দল।
গ্যারেথ সাউথগেটের মতো, ওয়েম্বলির ভূত তাড়ানোর ছিল মানচিনিরও। ১৯৯২ সালে সাম্পদোরিয়ার হয়ে ইউরোপিয়ান কাপের (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে হেরেছিলেন এই ওয়েম্বলিতেই। অতিরিক্ত সময়ের গোলে ০-১ ব্যবধানে পরাজয়ের সেই ম্যাচে ১১৮ মিনিট খেলেছিলেন মানচিনি।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের ২০২১ সালের রাতে মানচিনির আর ফিরে তাকাতে হয়নি ১৯৯২ সালের দিকে। তিনি জানেন, তার দেশের মিডিয়া ব্রিটিশদের অনুরূপভাবে তাকে নাইটহুডের মতো রাষ্ট্রীয় কোনো খেতাব দেয়ার দাবি করবে না। তবে তার স্বীকৃতি আর প্রাপ্য সম্মান চলে আসে বোনুচ্চির কথায়, দলের হাওয়া পাল্টে দিয়েছেন রবার্তো। দিনের পর দিন একত্রে থাকার পরেও এক অভিন্ন বোধ কাজ করছে সবার মধ্যে যে, একসাথে আমরা যেন অনাদিকাল থাকতেও বিরক্ত হবো না!
/আরএম