আশুলিয়াবিশেষ প্রতিবেদনস্থানীয় সংবাদ
রঙ্গিন ঘুড়ি, সাদা কালো স্বপ্ন; আশুলিয়ার নয়ন মিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হলো, তবে প্রকৃতির নিয়মে কালো মেঘের আড়ালে আবার রোদের ঝলমল আলো উঁকি দিলো। করোনার দানবের তান্ডবে যানবাহন শূন্য সড়ক-মহাসড়ক। পণ্যবাহী লরীর রিকসার শব্দ ছাড়া অনেকই নীরবতা। এমন অসময়ে রঙ্গিন ঘুড়ি হাতে সড়কে ধরে হাঁটছে কেউ একজন। না নিজের জন্য নয়, তিনি ঘুড়ি বিক্রেতা। যেখানে সাধারণ পণ্যের বেচা বিক্রিই কমে গেছে । সেখানে ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে? এমন কৌতুহল নিয়ে যাই সেই ব্যক্তির কাছে।
নাম তার নয়ন মিয়া। চুলে পাক ধরেনি, তবে বয়স প্রায় ৪০ ছুইছুই। সকাল থেকেই নিজের বানানো বাহারি রঙ্গের ঘুড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন ঘুড়ি বিক্রি করতে। দেখা যায়, আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে তাকে ঘিরে ধরেছে নানা বয়সের ক্রেতারা।
বছির উদ্দিন তাদের মধ্যে একজন, তিনি জানান, তার ছেলে ঘুড়ি কেনার বায়না ধরেছে তাই ৬০ টাকা দামের একটি ঘুড়ি কিনে তিনি বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।
নয়ন মিয়া জানান, উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে এবং ছোট বাচ্চাদের কাছে তাঁর ঘুড়ির চাহিদা ভালো থাকায় প্রতিদিন ১৫-২০টি ঘুড়ি বিক্রি করেন। হাজার খানেক টাকা বিক্রি হলেও, এরমধ্যে ঘুড়ি তৈরি খরচটাও রয়েছে। ৬০টাকা দামের ছোট ঘুড়ি বেশি বিক্রি হয় আর ৪৫০ টাকা দামের বড় ঘুড়ির চাহিদা তুলনামূলক কম। কয়েকদিন আগেও ৩০-৩৫টি বিক্রি করতে পারতেন এখন ঘুড়ি উড়ানো মৌসুম প্রায় শেষের দিকে তাই বেচা-বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।
নয়ন মিয়ার পেড়িয়ে আসার পিছনের গল্পটা হলো- প্রায় নয় বছর আগে নিজের বসতি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার হলিমা গ্রাম ছেড়ে সে স্বপরিবারে সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় আসেন জীবীকার তাগিদে। ডেন্ডাবর পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় দেলোয়ারের বাড়িতে ভাড়া থেকে অষ্টধাতুর আংটি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। করোনাভাইরাসের কারণে তাঁর আংটির ডালি নিয়ে বসতে পারছেন না রাস্তার পাশে। আর বসেইবা কি হবে ? বাসস্ট্যান্ড এবং হাট-বাজারে তেমন লোকজন থাকেনা ফলে বেচা বিক্রি একেবারেই নেই। শখের বসে ঘুড়ি বানানো শিখে ছিলেন, এখন এই দুর্দিনে বাসায় ঘুড়ি বানিয়ে পাড়া মহল্লায় বিক্রি করে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলছে তাঁর জীবনের দিনগুলো।