জীবন-যাপন

যে গ্রামের মানুষদের কোনো নাম নেই

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ নাম প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রতিটি মানব সন্তান জন্মগ্রহণের পর তাকে একটি নাম দেওয়া হয়। এই নাম নিয়েই সে তার জীবন অতিবাহিত করে। সৃষ্টির আদি থেকেই এই প্রথা মানব সমাজে বিদ্যমান।

তবে ভারতের এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে জন্মের পরে শিশুদের কোনো নাম দেওয়া হয় না। নামের বদলে একটি গানের সুরে তাদের ডাকা হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই সুরেই তারা পরিচিত হয়।

গ্রামটির নাম কং থং। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে গ্রামটির অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এই গ্রামটি বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। আধুনিক সভ্যতার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। ফলে গ্রামটি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।

কবে, কখন থেকে নামের বদলে সুরে সুরে শিশুদের ডাকা শুরু হয় তা সঠিকভাবে গ্রামের কেউই বলতে পারে না। তবে এই প্রথা নিয়ে গ্রামে একটি লোকগাথা প্রচলিত আছে। বহুদিন পূর্বে এক ব্যক্তি শত্রুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাছের ডালে লুকিয়ে ছিল। লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি সুরে সুরে তার সঙ্গীদের বিপদের সংকেত দেন। সংকেত পেয়ে তার বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে।

সেই থেকে শুরু। এরপর কালের বিবর্তনে এই সুরই জড়িয়ে গেছে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে। স্থান করে নিয়েছে নামের বিকল্প হিসেবে।

কংথন গ্রামে কোনো শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার মা নিজের পছন্দের একটি সুর শোনান সবাইকে, যার মধ্য দিয়ে পরিচিত হয় শিশুটি। আবার কখনো কখনো আত্মীয়-প্রতিবেশীরাও সদ্যজাত সন্তানের মাকে তাদের পছন্দের সুরটি শোনান। মায়ের যে সুরটি পছন্দ হয়, সেটিই হয়ে ওঠে তার সন্তানের পরিচয়। আর শিশুটি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন সে নিজেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নিজস্ব একটি সুর বা শিস তৈরি করে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close