জীবন-যাপন
যে গাছ স্পর্শ করলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়!
শম্পা জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক: সবুজ প্রকৃতির গাছ কখনো মৃত্যুর কারন হতে পারে? এমন কথা কি বিশ্বাস করার মত? তবে হা, পৃথিবীতে এমন গাছও রয়েছে। আবার সেই গাছে সাইনবোর্ড দিয়ে সর্তক করা হয়েছে সবাইকে।
সেই বিষাক্ত গাছ হলো “ম্যাঞ্চিনীল ট্রি”। এই গাছের ছাল, বাকল, পাতা, ফুল-ফল সহ প্রতিটি অংশই বিষাক্ত এবং মারাত্মক ক্ষতিকর। যার কোন অংশ সামান্য পরিমাণও শরীরে লাগলে ত্বকে ক্ষত, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
গ্রীনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও এ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত গাছ হিসেবে এই গাছটির “ম্যাঞ্চিনীল ট্রি ” নাম পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলস্বরূপ গাছটির বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয় “হিপোম্যানি ম্যাঞ্চিনেলা” নামে। “ম্যান্সিনেলা” শব্দটি স্প্যানিশ শব্দ “ম্যান্সিনিলা” থেকে এসেছে।
যার অর্থ “ছোট আপেল”। জানা যায় এই গাছের ফল এবং পাতা আপেলের গাছের মত হওয়ায় গাছটির নাম করন “ছোট আপেল” করা হয়। মুলত ফ্লোরিডা, ইউএস, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, উত্তর -দক্ষিন আমেরিকা নামক অঞ্চলে এই বিষাক্ত গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ধরনের গাছ মূলত উপকূলীয় অঞ্চল বা লোনা জলাভূমিতে জন্মায়।
ম্যাঞ্চিনীল গাছ চিরহরিৎ প্রজাতির হয়ে থাকে । এবং এটি উচ্চতায় সাধারণত ৫০ ফুট পর্যন্ত হয়। গাছটির পাতা সবুজ এবং ছাল ধূসর বর্ণের হয়। গাছটি ছোট আকারবিশিষ্ট সবুজাভ হলুদ রঙের ফল ধারণ করে, এবং ফলগুলোর ধরন আপেলের ন্যায় হয়ে থাকে। গাছটির প্রতিটি অংশজুড়ে যতটা সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হয় ঠিক ততটাই বিষাক্ত হয়ে থাকে। গাছটির রসে রয়েছে ফর বল নামক এক বিষাক্ত উপাদান এবং অন্যান্য ত্বক যন্ত্রণাদায়ক উপাদান যা শরীরের সংস্পর্শে এলে খুব পরিমাণ এলার্জি ড্রামা টাইটিস হয়। এই গাছের রস কারো শরীরে লাগলে শরীরে ফোসকা পড়ে যায়, গাড়িতে পড়লে গাড়ির রং জ্বলে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, এমনকি এই গাছ পোড়ানোর ধোয়া কোন সুস্থ মানুষের অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধারা এই গাছের রস তথা “বিষ” তীরের সঙ্গে মিশিয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। ১৫১৩ সালে জোয়ান পোনস ডি লিওন নামক এক ব্যক্তি ফ্লোরিডায় প্রথম ইউরোপীয় অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তার ৮ বছর পর ক্যালুসা যোদ্ধাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হোন। ১৫২১ সালে সেই ঘটনাস্থলে ক্যারিবীয় যোদ্ধাদের তৈরি কৃত বিষ তীর তথা ম্যাঞ্চিনীল স্যাপ মিশ্রিত তীর পোনস ডি লিওনের উরুতে এসে আঘাত করে যার ফলে তার মৃত্যু হয় যা ম্যাঞ্চিনীলের সর্বাধিক বিখ্যাত শিকার হিসাবে গণ্য করা হয়।
“ম্যঞ্চিনীল ট্রি” নামক বিষাক্ত গাছটির নানান ক্ষতিকারক দিকের পরিমাণ বেশি হলেও এর কিছু উপকারীতাও রয়েছে। বর্তমানে মানুষ এই গাছকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে । বিপদ সত্বেও মানুষ কয়েক শতাব্দি ধরে আসবাবপত্র তৈরিতে গাছটির কাঠ ব্যবহার করছে। সাবধানে কাজ কেটে এটি সূর্যের তাপে শুকিয়ে এর বিষাক্ত স্যাপ নিষ্ক্রিয়করণের পর ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে। আদিবাসীরা এই গাছের ছাল, আঠা দিয়ে ঔষধ এবং শুকনো ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করছে।
আশ্চর্যজনক হলেও বনের অন্যান্য পশু পাখি যখন এই গাছ থেকে দূরে থাকে তখন গুইসাপ প্রজাতির ছোট সরীসৃপ মধ্য এবং আমেরিকার গ্যারোবো বা স্ট্রিপড আইগুয়ানা নামক একমাত্র প্রাণী, যা এই গাছটিতে সকল বিপদ উপেক্ষা করে বসবাস করে। এবং এটি এই গাছের ফল কে নিজের আহার বা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ফলে যারা এই গাছটিকে সবচেয়ে বিপদজনক মনে করে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেয়।
যে সকল জায়গায় এই গাছ জন্মে সেখানকার মানুষজনদের এই গাছের কাছে না যাওয়ার জন্য সরকার কর্তৃক চারপাশে সতর্কতার নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চরম বিষাক্ত তার কারণে “ম্যাঞ্চিনীল ট্রি” বিভিন্ন থ্রিলার ও উপন্যাসে প্রায়শই স্থান পাচ্ছে।