খন্দকার হাবীব আহসান: আজন্ম নিষ্পেষিত-বঞ্চিত বাঙালী জাতির ক্রমশ শোষকের চোখে চোখ রেখে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দুর্বিনীত মস্তকে লড়াই শুরুর অপ্রতিরোধ্য মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান।কৈশোরে বেড়ে ওঠা থেকে আমৃত্যু তিনি যে ব্যক্তিত্ব বোধ নিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সংগ্রাম মূখর জীবন যাপন করেছেন সেই জীবনের জীবনী-শক্তি বাংলার জনগণের ভালবাসা,তাঁর বলিষ্ঠ আত্মবিশ্বাস আর পারিবারিক অনুপ্রেরণা।
বাঙালীর পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্তির লড়াই যে জীবন মরনের লড়াই ছিলো তা অনুধাবন করেই শেখ মুজিব সংগ্রামী জীবনে নিজেকে সপেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী সহ নানা চিঠি পত্রেও।শেখ মুজিব ১৯৫০ সালের ২১ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন-
Security prisoner
District jail,Faridpur
East Bengal,21.12.50
Jonab Suhrawardy Shaheb,
My salam to you. Very glad to hear that moulana Shaheb is out from the jail. He was suffering from blood pressure and heart trouble. Last November, i was transferred from Dacca jail to Gopalganj to produce before the golpalganj court. Again i was transferred to Faridpur jail because,in the sub-jail,there is no accommodation for the Security prisoner.I am to attend in all dates of the case from Faridpur jail. A single journey from Faridpur to Gopalganj requires 60 hours,the route and the conveyance generally used are proverbially tiresome.I do not know, how long this case Will continue, any how i do not care for that. Mr. Abdus Salam khan came to see me in Faridpur jail. He will move my Habeas corpus petition in the High Court. Mr. Salam khan also one of the accused in the Gopalganj case. This is the first case, in the history of Pakistan that Police entered inside the mosque and used lathi to dispersed the people.please don not thik for me.I know,those who prepared to die for any cause are seldom defeated. Great things are achieved through great sacrifice.Allah is more powerful than anybody else,and i want Justice from him.(short)
Your affectionately
Mujibur [/box]
ক্রমাগত কারাবরণকে স্বাভাবিক জীবনযাপন ভেবে শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনি যে লড়াই চলমান রেখেছিলেন তা ক্ষমতার বিচারে অসম কিন্তু আত্মবিশ্বাস আর ন্যায়ের পক্ষের আদর্শিক বিচারে ন্যায়সঙ্গত। এই লড়াই-ই পরবর্তীতে জন্ম দেয় বাঙালী জাতির স্বাধীকার আদায়ের স্বপ্নের, এই সাহসিকতা মিশে যায় ৭ কোটি বাঙালীর রক্ত প্রবাহে, অর্জিত হয় বাঙালী জাতির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বিশ্বমঞ্চে শোষণ থেকে মুক্তির মহানায়কের আসনে অধিষ্ঠিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সঙ্গত কারনে এই মহান নেতা হিমালয়সম বাধা হয়ে দাঁড়ান বাঙালী জাতিকে নিষ্পেষন করা শোষক গোষ্ঠীর নিকট এবং দেশীয় যে সকল ক্ষমতালোভী চক্রান্তকারীরা নতুন জন্ম নেওয়া দেশটাকে লুটপাট করে সম্ভোগের বাসনা পোষণ করেছিল তারাই রুপ নেয় বিশ্বাসঘাতক ঘাতকে।
একটি বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ার গল্পটি যেমন একজন বঙ্গবন্ধু জন্মের গল্পের থেকে এসেছে, তেমনি একটি বাংলাদেশ ঘাতকের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার গল্পটিও বঙ্গবন্ধুর বুলেট বিদ্ধ বুকের রক্তক্ষরণ থেকে এসেছে। এটিই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান বিয়োগাত্মক ট্রাজেডি, যার ক্ষত বাঙালীর হৃদয়ে অক্ষত। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর যেই আবেগ আর অপ্রতিরোধ্য সাহসিকতার রক্তপ্রবাহ থেকে স্বাধীন বাঙালী জাতির জন্ম দিয়েছিলেন,সেই রক্তস্রোত বাঙালীর ধমনীতে যতদিন আছে ততদিন শেখ মুজিবের মৃত্যু নেই,ততদিন বাঙালীর হৃদয়ের ক্ষত মুছে যাবার নয়।একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম নিতে যে গল্প রয়েছে তার পেছনের গল্প বাংলার কৃষক-শ্রমিক-জনতার সাথে একজন সাহসী তরুণের দেশপ্রেমের মেলবন্ধনের বিল্পবী প্রেমের গল্প। পিতা লুৎফর রহমান,মাতা সায়েরা খাতুন এবং সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তাঁর জন্য ছিলো অনুপ্রেরণা এবং সন্তানেরা সকলেই ছিলো তাঁর মত বিচক্ষণ,সাহসী,রাজনৈতিক সম্ভাবনাময়ী।
সদ্য স্বাধীন একটি যুদ্ধ বিধস্ত দেশের অর্জিত স্বাধীনতার প্রকৃত বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির যে সংগ্রাম বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন,এবং যে সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতক কিছু চক্রান্তকারীদের পরিকল্পনার বুলেট ক্ষত-বিক্ষত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুক। ভেঙে যায় বাঙালী জাতির স্বপ্ন-আশা। অতীত ঘৃণ্যতম চক্রান্তের রেখা বরাবর ৭৫ এর আগস্টের ১৫ তারিখ ইতিহাসের সীমা লঙ্ঘিত বর্বরতা দেখিয়ে ৭১ এ পরাজিত শক্তির ক্ষমতালোভী কাপুরষ প্রেতাত্মারা সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।জাতির পিতার রক্তে রক্তাক্ত হয় স্বপ্নের বাংলাদেশ।বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় সাত কোটি বাঙালীর ভালবাসার সুতাই বোনা হৃদয়টি।লোভীরা ক্ষমতার কেন্দ্রে আস্তানা গেড়ে আকষ্মিক আঘাতে দিশেহারা সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশকে চক্রান্তের কক্ষপথে ঘুরাতে থাকে পরাজিত শক্তির ইশারায়।বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বাংলাদেশকে স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ থেকে হঠাৎই ছুড়ে ফেলা হয় অসীম অন্ধকারের দিকে।রাষ্ট্রে চলতে থাকে স্বৈরাচারের বুলেট পিষ্ট নতজানু জীবনযাপন।
সেদিন ঘাতকের বুলেটে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল,শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল,শেখ জামালের স্ত্রী পারভীন জামাল রোজী,বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের,বঙ্গবন্ধুর সেজ বোনের স্বামী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত,বঙ্গবন্ধুর মেজ বোনের বড় ছেলে শেখ ফজলুল হক মনি,শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল,আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত,ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত,নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু,ভাতিজা শহীদ সেরনিয়াবাত এবং আব্দুল নঈম খান রিন্টু ।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পেছনে যে বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে তাদের ১৫ আগস্ট পরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক অবস্থানই বলে দেয় মূলত বাংলাদেশ ধ্বংসের একমাত্র পরিকল্পনার বাস্তবায়নই জন্ম দিয়েছে এই হৃদয়বিদারক ইতিহাসের কালো অধ্যায়।ঘাতকদের উদ্দেশ্য যদি বাঙালী জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা না হয়ে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হত,তাহলে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হতনা।ঘাতকের বুলেটের নিশানা অন্তত ছোট্ট শেখ রাসেলের বুক ভেদ করতো না।বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আগামীর সম্ভাবনাও ধ্বংস করে একটি বাংলাদেশের অসহায়ত্বের চুড়ান্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার অপচেষ্টা করেছিল ঘাতকরা।ভাগ্যের সহায়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা সে সময় ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বেলজিয়াম অবস্থানের কারণে প্রাণে বেঁচে যান।এই শেখ হাসিনাই যে যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা হয়ে একদিন বাঙ্গালী জাতির ভাগ্য উন্নয়নের বলিষ্ঠ কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হবে তা হয়ত ঘাতকদের অনুমেয় ছিলো না।
ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের হৃদপিণ্ড বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে ঘৃণ্যতম অধ্যায় সৃষ্টির চক্রান্তকারীরা হল- কর্নেল সৈয়দ ফারুক (সে সময়ের মেজর),সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, খন্দকার আব্দুর রশীদ,শরীফুল হক (ডালিম),আর্টিলারি মুহিউদ্দিন আহমেদ,ল্যান্সার মহিউদ্দিন,বজলুল হুদা,নূর চৌধুরী,রিসালদার মোসলেম উদ্দিন,এ এম রাশেদ চৌধুরী, আব্দুল আজিজ পাশা,ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ,খন্দকার মোশতাক,কে এম শফিউল্লাহ,জিয়াউর রহমান,আমিনুল ইসলাম খান। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১২ জন আসামীর মৃত্যু দণ্ডাদেশ হলেও ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১০ সালে, বাকিদের মধ্যে আজিজ পাশা ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা গিয়েছিলেন, আর বাকি ৬ জন এখনও পলাতক।
১৫ ই আগস্টের এই হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার কারনে স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালীর যে সম্ভাবনাময়ী ভবিষ্যৎ সূচিত হয়েছিল তা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দুর্ভাগ্যে পরিনত হয়। ক্রমাগত স্বৈরশাসকের বুলেটে পিষ্ট হতে থাকে বাংলার জনগণ সেই সাথে সীমাহীন দুর্নীতি আর শোষকের লোলুপ তান্ডবে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয় বাংলাদেশ। চলে ইতিহাস বিকৃতির মহাযজ্ঞ,শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা,অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে সম্পূর্ণভাবে,সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেও চলে প্রতিক্রিয়াশীলতার আগ্রাসন। বাঙ্গালীর নিজস্ব শিল্প সংষ্কৃতি ধ্বংস করে অপচেষ্টা চলে চুড়ান্ত বিকৃতির। প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তৎপর হয়ে ওঠে। মূলত স্বাধীন বাংলাদেশকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সাংষ্কৃতিকভাবে পরাধীন করার অপচেষ্ট চলে।
বাঙালী অনুধাবন করতে পেরেছিল প্রতি পদক্ষেপে যে একজন বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশ কতটা অসহায়!যেই অসহায়ত্ব বাঙালী জাতির প্রবাহমান রক্ত স্রোতে হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করে রেখেছে। যে ক্ষত কখনও মনে করিয়ে দেয় ‘আমরা পিতা হত্যা করা জাতি’ কখনও তুমুল জাগিয়ে তোলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের। বেদনার এই অক্ষত ক্ষতই স্বপ্ন দেখার সাহস যোগায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত আধুনিক সুখী বাংলাদেশ গড়তে।হৃদয়ে তুমুল তুফান তুলে ক্ষত বিক্ষত ক্ষত মনে করিয়ে দেয় ১৫ ই আগস্ট যতটা বেশি বেদনার তার চেয়ে বেশি শোককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্তিতে পরিনত করে গর্জে ওঠা তুমুল শক্তি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি জন্ম দেওয়ার জন্য যে ত্যাগ করে গেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে একটি রাষ্ট্র জন্মের জন্য কোন পরিবারের এমন আত্মত্যাগ নেই। এমনকি তুমুল তুফানে সবকিছু ধূলিসাৎ হয়ে গেলেও অবশিষ্ট হীরক খন্ড থেকে যে আবারো সূর্যের মত দীপ্তি নিয়ে জ্বলে ওঠা সম্ভব,একটি জাতিকে জাগিয়ে তুলে দুর্বার এগিয়ে নেওয়া সম্ভব সেটিই করে দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সহস্র ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেই হাসু আপা শেখান বঙ্গবন্ধু বেঁচে রবে তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়নে।
To provide the best experiences, we use technologies like cookies to store and/or access device information. Consenting to these technologies will allow us to process data such as browsing behavior or unique IDs on this site. Not consenting or withdrawing consent, may adversely affect certain features and functions.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.