আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
যেভাবে পাঠাও চালককে আশুলিয়ার ঐ বাঁশঝাড়ে নিয়েছিল দূর্বৃত্তরা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার কাঠগড়া পালোয়ান পাড়ার বাঁশঝাড়ে শামীম বেপারী বাবু (২৮) নামে এক পাঠাও চালককে খুন করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঐ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মো. শাহিন বেপারী (৫৮) আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় র্যাব-১ এর একটি দল আশুলিয়া থানাধীন জামগড়ার রূপায়ণ মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন মামুনুর রশিদ (২২), মাহবুবুর রহমান (২০) এবং মোমিন মিয়া (২০)। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকারীর রক্তমাখা প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিইও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা অন্য ছিনতাইকারীর মতো টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে না। তারা শুধু মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশার মতো ছোটো যানবাহন ছিনতাই করে। চক্রটি শামীমকে হত্যার পর ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলে এবং নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখে। জ্যাকেটে রক্ত লেগে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে খুলে ফেলে দেয় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও ঘটনাস্থলে ফেলে যায়।
গ্রেফতার মামুনুর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে পেশায় একজন গার্মেন্টনকর্মী। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সে ছিনতাইকারী এ চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, ঘটনার আগের দিন রাতে সে ভিকটিমের মোটরসাইকেল দিয়ে গাবতলী থেকে আশুলিয়া যায়। ঘটনার দিন আবার ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার মোটরসাইকেলে গাবতলী থেকে আশুলিয়ায় পৌঁছে দিতে বলে। সন্ধ্যায় গাবতলী থেকে আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধূমপানের কথা বলে পাশের বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওত পেতে থাকা মাহবুব ও মোমিন ভিকটিমের ওপর আক্রমণ করে।
আরও পড়ুনঃ
আশুলিয়ায় বাঁশঝাড়ে যুবকের নিথর দেহ, পাশে রক্তমাখা ছুরি (ভিডিও)
আশুলিয়ায় পাঠাও চালক হত্যা ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক ৩
গ্রেফতার মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জামগড়া এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান আছে। তার চায়ের দোকানে বসেই তারা সব ধরনের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন ভিকটিমকে সেই প্রথম ছুরি দিয়ে আঘাত করে। গ্রেফতার মোমিন মিয়া জানায়, সেও পেশায় একজন গার্মেন্টসকর্মী। প্রায় ১১ বছর ধরে আশুলিয়া এলাকায় এ চক্রের হয়ে ছিনতাই করা গাড়ি বিক্রয়ের কাজ করে।
টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন কিংবা স্বর্ণালংকার নয়, ওদের টার্গেট মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশার মতো ছোটো যানবাহন ছিনতাই করা। ছিনতাইয়ের জন্য কখনো যাত্রীবেশে, কখনো বিয়ের জন্য গাড়ি ভাড়া করত তারা। এমনকি ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে জখম কিংবা হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতেও তারা পিছপা হতো না। প্রথমে তারা টার্গেট করে নির্ধারিত গন্তব্য ঠিক করে যানবাহনসহ চালককে নিয়ে যায়। যেখানে আগে থেকেই তাদের অন্য সহযোগীরা ওত পেতে থাকে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছামাত্র চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে যানবাহন নিয়ে নিরাপদে সটকে পড়ে।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার শামীম ব্যাপারীর গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা থানায়। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। স্ত্রীসহ খিলগাঁও থানাধীন মেরাদিয়া মধ্যপাড়ায় তিনি বসবাস করতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেছিলেন।
পরবর্তীতে নিজে একটি মোটরসাইকেল কিনে অ্যাপভিত্তিক রাউড শেয়ারের কাজ শুরু করেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর রামপুরার ফরাজি হাসপাতালের সামনে থেকে যাত্রী নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হন শামীম। কিন্তু রাত গভীর হলেও বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন তার মোবাইলে কল দেয়। রাত ১১টায় তারা টেলিভিশনের খবরে শামীমের নিহত হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন।
/আরএম