প্রধান শিরোনাম
ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করা পাগলা মিজানের অবৈধ সম্পদের পাহাড়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বেরিয়ে আসছে ডিএনসিসি ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের অবৈধ সম্পদের তথ্য।
মোহাম্মদপুরে সরকারি জমিতে তিনি দুটি ভবন নির্মাণ করেছেন। ভবন দুটিতে তার ২৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া নয়াপল্টনে মিজানের মালিকানাধীন ছয়তলা বাড়ি, মোহাম্মদপুরে ১০ কাঠা ও গাজীপুরে ৩৫ কাঠার প্লট রয়েছে। গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য জানান।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় পাগলা মিজান একজন দখলবাজ হিসেবে পরিচিত। স্বপ্নপুরীর হাউজিং কমপ্লেক্সের সামনের মাঠটিও তিনি দখলে নিয়েছেন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে ৩০ কাঠার একটি প্লট দখল করে গড়ে তুলেছেন মার্কেট। এছাড়া মোহাম্মদপুর সমবায় মার্কেট ও জেনেভা ক্যাম্পের টোল মার্কেটও তার দখলে। সিটি কর্পোরেশনের নাম করে এসব মার্কেট থেকে তিনি মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলেন।
র্যাব জানায়, দেশের বাইরে দুটি বাড়ি ও দামি গাড়ি আছে। এর মধ্যে আমেরিকায় একটি বাড়ি এবং আরেকটি বাড়ি অস্ট্রেলিয়ায়। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ থেকেই মিজান এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে।
সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে র্যাব গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও প্রায় তিন লাখ টাকা জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজি, ফ্রীডম পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, খুন ও সন্ত্রাসে জড়িত থাকার বহু অভিযোগ রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, পাগলা মিজান ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি থেকে শুরু করে মানুষ হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসায় যারা হামলা করেছিল তার একজন পাগলা মিজান। অথচ সময়ের স্রোতে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। ভোল পাল্টিয়েছেন তিনি। পাল্টে ফেলেছেন নামটিও। তিনি এখন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেছেন অপরাধ সাম্রাজ্য। মাদক কারবার থেকে শুরু করে খুনখারাবি পর্যন্ত নানা অপরাধমূলক কাজে তার নাম উঠে এসেছে বার বার।
আওয়ামী লীগের এই নেতার বর্তমান নাম হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান হলেও আগে তার নাম ছিল মিজানুর রহমান মিজান। সূত্র জানায়, মহাজোট সরকার আমলে মিজান বাহিনী ৩০০-৪০০ কোটি টাকার শুধু টেন্ডারবাজি করেছে। এ ছাড়া ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে মাদক ও চোরাই গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবসার নিয়ন্ত্রক তিনি। স্থানীয়রা বলেন, খুনখারাবি তো পাগলা মিজানের বাম হাতের খেলা। ভয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথাও বলে না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনেক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ কর্মকর্তা তার অপকর্মে সহযোগিতা করেন। এ কারণে অপরাধ করেও তিনি পার পেয়ে যান সবসময়।
র্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজান কাউন্সিলর হিসেবে ৩৬ হাজার টাকা সরকারি সম্মানির বাইরে কোনো আয়ের কথা বলতে পারেননি। কিন্তু তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের চেক ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়েছে। সেসব অর্থের বিষয়ে মিজান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ১৫ বছর আগে তার ইটভাটার ব্যবসা থাকলেও এখন আলাদা কোনো আয়ের উৎস নেই। অন্যদিকে টেক্সাস ও সিডনিতে তার বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ির তথ্য পেয়েছে র্যাব। দেশ থেকে অবৈধ আয়ের অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন পাগলা মিজান, এমনটাই ধারণা তাদের। তার বিরুদ্ধে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি ছাড়াও আছে ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, ডিএনসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ফ্রীডম পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, খুন, সন্ত্রাস, জমি দখল ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
/আরএম