প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
মানুষের রক্তের নেশা কেন মশাদের! (ভিডিও)
নাহিদ হাসান শুভঃ মশা এমন এক প্রাণী, যাকে সম্ভবত আমরা সকলেই ঘৃণার চোখে দেখি, ঘৃণা না করলেও অন্তত মশা দেখে বিরক্ত হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা এত কষ্ট করে খেয়েদেয়ে রক্ত বানাই শরীরে, আর সেই রক্তই কিনা অবলীলায় শুষে নিচ্ছে এই পুচকে প্রাণী! বিরক্ত বা ঘৃণা হওয়ারই তো কথা।
আচ্ছা, মশাকে কেন রক্তই খেতে হয়? রক্ত খেতে এসে তাকে কেন গান শোনাতে হয়? না টেনে দেখতে থাকুন পুরো ভিডিওটি, জানুন মশা সম্পর্কে অজানা কিছু কথা-
প্রাণীজগতের সবচেয়ে বড় পর্ব আর্থ্রোপোডার মাছি বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী মশা। সারাবিশ্বে মশার সাড়ে ৩ হাজারের বেশি জাত রয়েছে। দেশভেদে অবশ্য সংখ্যাটা শ’পাঁচেকের বেশি নয়। যুক্তরাষ্ট্রে দুই শতাধিক প্রজাতি রয়েছে মশার। বাংলাদেশে সংখ্যাটা একটু কম, প্রায় ১২৩ প্রজাতির। তবে সব মশাই যে ক্ষতিকর, এমনটা কিন্তু না। বাংলাদেশেই যেমন ১২৩টির মধ্যে শুধু ২২ প্রজাতির মশা রোগ ছড়ায়। এরা যে শুধু মানুষের রক্তই পান করে এমনও নয়। ধরুন, বৈশিষ্ট্য কিংবা স্বভাবভেদে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্তেও ভাগ বসায় মশা। এমনকি মাছের রক্তেও ভাগ বসানোর মতো মশার প্রজাতি রয়েছে।
মশাদের মধ্যে শুধু স্ত্রী মশারাই জীবের রক্ত পান করে। কারণ, তাদের ডিম পাড়া ও বংশবিস্তারের জন্য বাড়তি প্রোটিন দরকার হয়, যা রক্ত থেকে পায় এরা। পুরুষ মশারা বেঁচে থাকে উদ্ভিদের বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে। ফুলের রস, মধু কিংবা গাছের কাণ্ড থেকে বিভিন্ন প্রকারের রস শোষণের মাধ্যমে তারা জীবন অতিবাহিত করে।
মশা কেন মানুষের রক্তের পেছনে ছোটে? গেল বছর (২০২০) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এক গবেষণা করেছেন। তারা আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের প্রায় ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে এডিস এজিপ্টি জাতের মশার ডিম সংগ্রহ করেন। এরপর এগুলোকে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ল্যাব বক্সে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে গবেষক দলটির সদস্য অধ্যাপক নোহ রোজ জানান, সব অঞ্চলের মশার রক্তের নেশা নেই। যে অঞ্চলে খরা বা উত্তাপ বেশি সে অঞ্চলে প্রজননের জন্য আর্দ্রতার প্রয়োজন মেটাতে রক্তের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে মশা। একপ্রকার নিরুপায় হয়েই তাদের এই পথ বেছে নিতে হয় বলে মত এই গবেষকের।
মশা তার ছোট্ট দুই ডানা সেকেন্ডে প্রায় আড়াই শতাধিক বার ঝাপ্টায়। এই ডানা ঝাপ্টানোর শব্দই আমাদের কাছে মশার গান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মশা আকারে খুব ছোট বলে শুধু আমাদের কানের কাছে এলেই সেই শব্দ আমরা শুনতে পাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মশাদের কাছে কেন মানুষের কান এত প্রিয়? কেন তারা আমাদের কানের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে?
গবেষণা বলছে, এর প্রধান কারণ গন্ধ। আমাদের দেহের সবচেয়ে নোংরা জায়গা হিসেবে কানকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, বিশেষত কানের ভেতরের জায়গা। কানের ছিদ্র সবসময় খোলা থাকায় সহজেই এর ভেতরে ধূলো-ময়লা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন যদি এই ময়লা পরিষ্কার না করা হয় তাহলে সেটি ময়লা আকারে জমতে থাকে। এই ময়লাকে বলা হয় ওয়াক্স বা ‘খইল’।খইল থেকে একধরনের গন্ধ নির্গত হয়, যা মশার খুবই প্রিয়। এজন্যই মশাকে কানের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায় বেশি।
তবে এটিই কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আরেকটি কারণ হতে পারে আমাদের শরীর থেকে নিঃশ্বাসের সাথে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের শরীর থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড, আমাদের শরীরের উষ্ণতা এবং আর্দ্রতার মাধ্যমে মশা আমাদের চিহ্নিত করে থাকে। তখন মশাকে আমাদের নাক ও মুখের আশেপাশে বেশি ঘুরতে দেখা যায়।
ভিডিও দেখুনঃ
/এন এইচ