অন্যদিকে
মহামূল্যবান সুগন্ধি কস্তুরী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মহামূল্যবান প্রাণিজ সুগন্ধি। হরিণের নাভীতে সৃষ্ট গ্রন্থি নিঃসৃত সুগন্ধিই কস্তুরী। খুবই মূল্যবান। এ ঘ্রাণকে বলা হয় যোজনগন্ধা।
অথচ এর গভীরে লুকানো নির্মম ট্র্যাজেডি ক’জনেই বা মনে রাখে!
কথিত আছে, কস্তুরীর এক তিল পরিমাণ কোন বাড়িতে পড়লে বহু বছর সেখানে এর ঘ্রাণ থাকে। তিন হাজার ভাগ গন্ধহীন পদার্থের সাথে এর এক ভাগ মেশালে সমস্ত পদার্থই সুবাসিত হয় কস্তুরীর ঘ্রাণে।
নারী নয়, পুরুষ হরিণের নাভিতে পাওয়া যায় এ সুগন্ধি। আবার সব পুরুষ হরিণ নয়, আলাদা প্রজাতির কস্তুরীমৃগ বা ‘মাস্ক ডিয়ার” এর নাভিতে। স্বভাবে লাজুক, টানা টানা চোখ আর নির্জনতাপ্রিয় এ হরিণের দেখা মেলে হিমালয়ের উঁচু পার্বত্যভূমিতে, পামীর মালভূমির উঁচু তৃণভূমিতে, সবুজ উপত্যকায়।
অল্পবয়সেই নাভিমুখের গ্রন্থিতে জন্ম নেয়া সুগন্ধি কোষ পরিপক্ক হয় হরিণের দশবছর পূর্ণ হলে। ছড়িয়ে পড়ে তীব্র সৌরভ। তখন তার পরিপূর্ণ যৌবন। সে প্রজনন বা মিলন ঋতুতে ছড়িয়ে পড়া বনসৌরভে আকৃষ্ট হয় হরিণী। অতপর শরীর থেকে খসে পড়ে পশমে আবৃত সুগন্ধিথলি।
হিমালয় পর্বতমালার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উৎকৃষ্ট কস্তুরীমৃগ পাওয়া যায়। এছাড়াও সাইবেরিয়া, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, কোরিয়া এবং নেপালে এই হরিণগুলোর দেখা মেলে। ওই অঞ্চলে এক প্রকার ছোট আকারের হরিণ আছে। এরা ছাগলের চেয়ে বড় নয় কিন্তু দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। এদের পা অতি সরু, মাথা সুন্দর এবং চোখ চমৎকার উজ্জ্বল। কস্তুরী মৃগের উপরের মাড়ি থেকে গজদন্তের মতো দুটি দাঁত ছোট আকারে বের হয়। এ ধরনের দাঁত সব প্রজাতির হরিণের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এই দেখেই কস্তুরী মৃগ সনাক্ত করা হয়। অত্যন্ত শীতল পার্বত্য পরিবেশে বাস করায় এদের লোম সরু না হয়ে অত্যন্ত মোটা ও পালকের মতো হয়।
কস্তুরী যখন সংগ্রহ করা হয় তখন এর গন্ধ এত উগ্র থাকে যে হরিণের নাভিকোষ কেটে নেয়ার সময় শিকারিরা মোটা কাপড় দিয়ে নিজেদের নাক বেঁধে নেয়। অনেক সময় এ গন্ধ সহ্য করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারো কারো চোখ, নাক থেকে জল ও মুখ থেকে লালা ঝরা শুরু হয়। এমনকি জীবনহানিও ঘটে।
কস্তুরী দেহসৌরভছাড়াও ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। এর বাইরেও আছে বহুবিধ ব্যবহার। মোগল সম্রাটরা এ মূল্যবান সুগন্ধি ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
/এন এইচ