দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
মরিচের গুঁড়া দিয়ে সাংবাদিকের চোখ নষ্ট করে দেন ওসি প্রদীপ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। দিন যতই যাচ্ছে তার ভয়ংকর তথ্য ততই বেরিয়ে আসছে। প্রদীপের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারতেন না এতোদিন। বললেই তার ভাগ্যে জুটতো ‘বন্দুকযুদ্ধ’, নয়তো মামলা কিংবা নির্যাতন।
প্রদীপের হাত থেকে গণমাধ্যমকর্মীরাও রেহাই পাননি। তার বিরুদ্ধে সংবাদ করায় পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ফরিদুল মোস্তফা খান নামে এক সাংবাদিক। কোনো অপরাধ না করেও এখনো কারাবন্দি মাসের পর মাস।
ফরিদুল মোস্তফা খান দৈনিক কক্সবাজার বাণী এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘জনতার বাণী ডটকম’র সম্পাদক ও প্রকাশক। প্রদীপ কুমার দাশের নির্যাতনে চোখ হারিয়েছেন তিনি। থানা হাজতে তো নয়ই, কারাগারে নেয়ার পরও ফরিদুল কোনো চিকিৎসা না পেয়ে আজ তিনি পঙ্গু। ১১ মাস ধরে ছয়টি মিথ্যা মামলায় বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন এই সংবাদকর্মী।
কারাবন্দি জীবনে কোনো রকম বেঁচে আছেন ফরিদুল। তার ওপর নির্মম এ নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতেও সাহস পাননি।
২০১৯ সালের ২৪ জুন ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন ফরিদুল মোস্তফা খান। এরই জেরে একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ফরিদুলকে আটক করা হয়। এরপর টেকনাফ থানায় এনে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালান প্রদীপ কুমার। দুই চোখে দেয়া হয় মরিচের গুঁড়া। বর্তমানে দুটি চোখই নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
এছাড়া ফরিদুল মোস্তফার হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন ওসি প্রদীপ। এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি, ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে ফরিদুল মোস্তফা খানকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলায় জামিনের ক্ষেত্রেও নানা প্রভাব ও কূটকৌশল খাটিয়ে বাধার সৃষ্টি করে নির্যাতিত সাংবাদিককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন প্রদীপ কুমার।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের শাহআলীবাগের প্রতীক হাসনাহেনা বাসায় অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। মিরপুর মডেল থানার পুলিশের সহায়তায় অভিযানে অংশ নেয় টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। পরে ফরিদুলকে নিয়ে লোক দেখানো অভিযানে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় বাড়ি থেকে গুলিসহ দুইটি অস্ত্র, চার হাজার ইয়াবা ও বিপুলসংখ্যক বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার দেখায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে কক্সবাজার মডেল পুলিশ।
সাংবাদিক ফরিদুলের একটাই অপরাধ ছিল। তিনি গ্রেফতারের কয়েক মাস আগে কক্সবাজার জেলার মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সিন্ডিকেট, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ঘুষ, দুর্নীতিসহ টেকনাফ থানা ও সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ‘কক্সবাজার জেলার আইনশৃঙ্খলার অবনতি’, ‘অপরাধে নিমজ্জিত টেকনাফ থানার ওসি’, ‘টাকা না পেলে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজাচ্ছে ওসি প্রদীপ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপরই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান রোষানলে পড়েন।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে একজনকে বাদী সাজিয়ে টেকনাফ থানায় চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। ফরিদুল পুলিশের আক্রোশ থেকে বাঁচতে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঢাকায় আত্মগোপন করেন।
ফরিদুলের কারাবন্দি এ ১১ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে তিন ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা। তিন সন্তান আর বৃদ্ধা মা নিয়ে চরম অভাব-অনটনে দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের। সংসার ও মামলার খরচ চালাতে বসতভিটা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
/এন এইচ