বিনোদনসাক্ষাৎকার
ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় কষ্টকর হবে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনা মহামারি পেরিয়ে মানুষ আবার ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে। শুটিং স্পটগুলো হয়ে উঠবে মুখর। নতুন সিনেমা আসবে, সেসব সিনেমা হাসি ফোটাবে মানুষের মুখে। করোনা পরবর্তী সময়ের সিনেমা ও জীবন নিয়ে বলছিলেন মৌসুমী। জানালেন কেমন কাটছে তাঁর ঘরবন্দী জীবন।
লকডাউন পরিস্থিতিতে সবাই ঘরবন্দী। কেমনভাবে কাটছে এই সময়টা?
এটা অবসরের সময় নয়। কেউ অবশ্য মনেও করছে না এখন অবসর বা ছুটি চলছে। লকডাউনের প্রথম কয়েকটা দিন একভাবে কেটেছে, মাস পেরোনোর পর চিন্তাভাবনা বদলে গেছে কিন্তু। সবার মধ্যে একটাই চিন্তা, কবে ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন। ছেলে-মেয়ে, স্বামীসহ সবাইকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে। একটা পরিবারে অনেক ধরনের কাজ, সময় যে কখন কেটে যায় টেরই পাই না।
লকডাউন পরিস্থিতি কেটে গেলেও চলচ্চিত্র স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে সময় লাগবে কি?
এখন কিন্তু সবাই জমা থেকে খরচ করছেন। লকডাউন উঠে গেলে তাই শুরুতে প্রতিটা মানুষের চিন্তা থাকবে আয়ের চাকা সচল করা। সবাই আবার দৌড়াবে। মানুষ বেসিক চাহিদা মেটাতে বেশি ব্যস্ত থাকবে। শুরুতে সিনেমা নিয়ে ভাবার সময় খুব একটা থাকবে না। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে মানুষ তখন সিনেমা নিয়ে ভাববে। তবে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি ঠিক না হলে ছবির শুটিং নিয়েও বিপাকে পড়তে হবে। এটা ঠিক যে লকডাউন পরিস্থিতিতে আমরা উপলব্ধি করেছি, সুস্থ বিনোদন দরকার। তাই বিনোদনের বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র নিয়ে ভালোভাবে ভাবার দরকার আছে।
বিনোদন যে অত্যন্ত জরুরি একটা ব্যাপার, সেটা এখন আরও ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে, তা–ই না? প্রয়োজনীয় কাজকর্মের পর বাকি সময়টা মানুষ বিনোদনের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছে। একমাত্র সুস্থ বিনোদনই পারে মানুষকে নানা রকম বাজে চিন্তা থেকে দূরে রাখতে। আমি তো গভীরভাবে ভাবলাম, আজ এসব যদি না থাকত, কী যে হতো! টিভি খুললেই দেখি হয় আমাদের সিনেমা, না হয় কোনো সিরিয়াল। সংবাদের চ্যানেলগুলো করোনা করোনা আর করোনা এসব নিয়েই ব্যস্ত। দর্শকদের সুস্থ বিনোদন উপহার দিতে করোনার পর আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। একসঙ্গে এই লড়াইয়ে সরকারকেও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
সরকার তো চলচ্চিত্র বানানোর জন্য অনুদান দিয়েই থাকে?
অনুদান তো সব সময়ই দেয়। কিন্তু এই সংকট সময়ে কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। সেসব প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে, যারা গত এক-দুই বছরে চলচ্চিত্রে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল। বেশি ছবি বানিয়ে যাচ্ছিল। একই সঙ্গে যাদের ছবির শুটিং মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, ক্ষতির মধ্যে পড়েছে, তাদের বিষয়েও ভাবতে হবে। আমি মনে করি, প্রথম এক বছর তো অবশ্যই, আর যদি দুই বছর হয়, তাহলে আরও ভালো। কমপক্ষে মাসে দুটি করে হলেও বছরে এফডিসি ঘরানার ২৪ সিনেমার পেছনে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে, যা আসলে সরকারের জন্য কিছুই না। তবে এসব সিনেমার আয় নিশ্চিত করতেও হবে। যাঁদের দ্বারা ব্যবসা হবে এবং যাঁরা এই সময়টায় সক্রিয়, তাঁরাই যেন এই প্রণোদনা পান। প্রণোদনা শিল্পের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে সঠিক তথ্য উপাত্ত দেখে ক্ষতিগ্রস্ত প্রযোজক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।
গবেষকেরা বলছেন, লকডাউনের পরও বছর দুয়েক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তাহলে শুটিং কীভাবে হবে?
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে ছবি তৈরির ক্ষেত্রে একটা ঝামেলা হতেই পারে। একটা ছবির শুটিংয়ে কমপক্ষে ৫০ জন থেকে শুরু করে দেড় শ–দুই শ জনও মানুষ থাকেন। শুটিংয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মুশকিল। নায়ক-নায়িকার রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয়ের সময় সামাজিক দূরত্ব মানা একেবারেই সম্ভব না। তাই বলা যেতে পারে, করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় কষ্টকর হবে। আবার শুটিং যদিও করা হয়, ছবিটি দেখানোর জন্য বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।
তার মানে প্রেক্ষাগৃহও ভীষণ ক্ষতির মধ্যে আছে। অবশ্যই। প্রেক্ষাগৃহে একটা সিটের সঙ্গে আরেকটা লাগোয়া। বিকল্প উপায়ে সিনেমা দেখানোর কথা এখন আমাদের জোরেশোরে ভাবতে হবে। বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ, দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি না দেখলেও ঘরে বসে কিন্তু দেখছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হবে প্রধান আয়ের উৎস। ধরন বদলে যাবে। তারপরও বড় পর্দায় দেখার চাহিদা থাকবে। আর পৃথিবী তো থেমে থাকবে না, কোনো না কোনো উপায় বের হবেই।
/এন এইচ