প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে

ভ্যাকসিনের দৌড়ে চীন,যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন—কে কোথায় আছে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বিশ্বজুড়ে (কোভিড ১৯) এর বিস্তার মোকাবিলায় ভ্যাকসিন তৈরির তোড়জোড় চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। তবে ভ্যাকসিন কে সবার আগে ছাড়বে, তা নিয়ে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে মর্যাদার লড়াই চলছে বলে মনে হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করে রেখেছেন, যা নিরাপদ প্রমাণিত হলেই ছাড়া হবে। এর পরপরই চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের হাতেও শরতের আগেই ভ্যাকসিন থাকবে।

চীন-মার্কিন ভ্যাকসিন-লড়াইয়ের মধ্যে সুখবর দিচ্ছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের আশা, কম খরচে আগামী বছরের শুরুতেই বিশ্বের হাতে ভ্যাকসিন তুলে দিতে পারবেন তাঁরা।

দাতব্য সংস্থা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ২২৪টি ভ্যাকসিন উন্নয়নে কাজ চলছে। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকাতেই চলছে ৪৯ শতাংশ প্রকল্প। তবে মানবশরীরের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৫টি ভ্যাকসিন নিয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা আত্মপরিবর্ধনকারী আরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরি করছেন। তাঁরা ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য বিশেষ কোম্পানি তৈরি করছেন, যাতে তাঁদের ভ্যাকসিন সফল হলে গরিবদের কাছে সহজে তা পৌঁছে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্র তাঁরা বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করছেন। এর বাইরে নিজস্ব সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ তৈরি করে তাঁরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চাইছেন।

ইম্পেরিয়াল কলেজ ও হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মর্নিংসাইড ভেঞ্চার্সের উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকুইটি গ্লোবাল হেলথ নামের এ উদ্যোগের পরিচালক সিমন হেপওর্থ বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা পয়সা কামানোর চেয়ে সমস্যা সমাধানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীদের তৈরি আরএনএ ভ্যাকসিন মূলত পেশিকোষে জিনগত নির্দেশ সরবরাহ করে, যাতে কোষ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে পারে। এ প্রোটিনের উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধী সক্ষমতাকে প্ররোচিত করে, যাতে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি হয়। ভ্যাকসিনটি প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় যাচ্ছে। ১৫ জুন থেকে ৩০০ মানুষকে নিয়ে দুটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হবে। প্রথম ধাপের পরীক্ষা সফল হলে ছয় হাজার মানুষকে নিয়ে আগামী অক্টোবরে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আশা করছেন, আগামী বছরের শুরুতেই যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন দিতে পারবেন তাঁরা।

এদিকে চীনের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। দেশটির একজন বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই চীনে ‘জরুরি ব্যবহারের’ জন্য ভ্যাকসিন ছাড়া হতে পারে।

ডা. ঝং নানশান বলেন, এই শরতের প্রথম দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে। তবে তিনি ভ্যাকসিন কোম্পানির নাম প্রকাশ করেননি। তিনি বলেছেন, এ বছরের মধ্যেই জরুরি ব্যবহারের জন্য ভ্যাকসিন ছাড়া হবে। খুব জরুরি প্রয়োজন হলে শরৎ বা শীতের মধ্যেই তা চলে আসতে পারে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত নানশান বলেন, হার্ড ইমিউনিটি নয়, ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি এ মহামারি ঠেকাতে পারে। গত রোববার প্রকাশিত ‘ফাইটিং কোভিড-১৯: চায়না ইন অ্যাকশন’ শীর্ষক সরকারি এক শ্বেতপত্রে বলা হয়, চীনা গবেষকেদের তৈরি কমপক্ষে পাঁচটি ভ্যাকসিন মানবশরীরে পরীক্ষা চলছে। পাঁচটি ভ্যাকসিন পাঁচ ধরনের পথে এগোচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ইনঅ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিন, রিকমবিন্যান্ট প্রোটিন ভ্যাকসিন, অ্যাটেনিউয়েটেড ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ভ্যাকসিন, অ্যাডেনোভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের তৈরি পরীক্ষামূলক ‘এজেডডি১২২’ ভ্যাকসিনটির ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদনকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী গিলিয়েড সায়েন্সের কাছে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়েড কোভিড-১৯ চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছে। তাদের তৈরি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভিরই হলো প্রথম ওষুধ, যা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় রোগীদের উন্নতি দেখিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও গিলিয়েডের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হতে পারে। দুটি কোম্পানি এক হলে তাদের বাজার মূলধন ২৩২ বিলিয়নে দাঁড়াবে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী প্যাকসেল সারিওট বিবিসি রেডিওকে বলেছেন, ‘আমরা এখনো পথেই আছি। আমরা এখন ভ্যাকসিন উৎপাদন করছি। ফলাফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের এখনকার অনুমান হচ্ছে, এবারের গ্রীষ্মের আগেই তথ্য হাতে চলে আসবে। আগস্ট মাস নাগাদ বা সেপ্টেম্বর নাগাদ কার্যকর ভ্যাকসিন আছে কি নেই, তার ফয়সালা হয়ে যাবে।’

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Optický klam Najdete psa za 10 Hádanka pro moderní Einsteiny: Jak správně spočítat zmrzlinu Hádanka: najděte koně mezi soby Test IQ: Musíte najít sněhuláka za 12 Jaký je IQ dřevorubců? Velmi jednoduchý
Close
Close