বিশ্বজুড়ে
ভুয়া সৌদী প্রিন্স সেজে বিলাসী জীবন যাপন ৩০ বছর ধরে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ৪৮ বছর বয়সী অ্যানথনি গিগন্যাক নিজেকে প্রিন্স খালিদ বিন আল-সৌদ নামে পরিচয় দিয়ে ফ্লোরিডার মিয়ামি শহরের বিলাসবহুল দ্বীপ ফিশার আইল্যান্ডে বসবাস করতেন। নিজের এই পরিচয় প্রমাণ করার জন্য তিনি প্রচুর ভুয়া কূটনৈতিক কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিলেন।
এমনকি তাকে আশপাশ থেকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখত একদল দেহরক্ষী। ভুয়া কাগজপত্র এবং চালচলনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে সৌদি রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে দাবি করতেন এবং সবার কাছে আশা করতেন যেন তার সঙ্গে রয়্যাল প্রটোকল অনুযায়ীই আচরণ করা হয়।
এই রয়্যাল প্রটোকলের অযুহাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বহুমূল্য সব উপহার নিতেন ‘প্রিন্স খালিদ বিন আল-সৌদ’। অসংখ্য বিনিয়োগকারী নগদ অর্থ তার অ্যাকাউন্টে জমা করতেন এই আশায় যে, অর্থগুলো ব্যবসায় খাটাবেন তিনি।
কিন্তু ব্যবসার বদলে এই অর্থ দিয়ে ডিজাইনার পোশাক, ইয়টসহ দামিদামি জিনিসপত্র কিনতে শুরু করেন গিগন্যাক। এসব দামি দামি উপহার ও অর্থ হাতিয়ে বাস্তবিকই রাজপুত্রের মতো বিলাসবহুল জীবন কাটাতে শুরু করেন তিনি।
ফিশার আইল্যান্ডে বিশাল রাজকীয় কন্ডোতে থাকতেন অ্যানথনি গিগন্যাক। সেই বাড়ির সামনের দরজায় খোদাই করে লেখা ‘সুলতান’। চলাচল করতে ফেরারি গাড়িতে। সেই গাড়ির নম্বরপ্লেটও দুই নম্বর! ভুয়া কূটনৈতিক লাইসেন্স প্লেট লাগিয়ে সেই গাড়ি চালাতেন গিগন্যাক।
অবশ্য ২০১৭ সালে মিয়ামিতে আসার অনেক আগেই প্রিন্স খালিদ নামে জালিয়াতি শুরু করেছিলেন অ্যানথনি গিগন্যাক।
কলম্বিয়ায় জন্ম নেয়া গিগন্যাককে ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের অধিবাসী একটি পরিবার দত্তক নেয়। এর বছর দশেক পর ১৭ বছর বয়স থেকে প্রথম রাজপুত্রের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার শুরু করেন তিনি।
এরপর থেকে গিগন্যাক কয়েকবার জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো তাকে আটকে রাখতে পারেনি। শেষমেশ মিয়ামিতে চলে আসেন তিনি।
কিন্তু কপাল যখন খারাপ হয় তখন আর কিছুই করার থাকে না। এত বছরের জালিয়াতির ক্যারিয়ার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে যখন একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলতে এসে দেখলেন গিগন্যাক মনের সুখে হ্যাম, বেকনসহ শুকরের মাংস দিয়ে তৈরি নানা খাবার খেয়ে যাচ্ছেন।
শুকরের মাংস খাওয়া একজন মুসলিমের জন্য নিষিদ্ধ। সেখানে সৌদি রাজপরিবারের একজন সদস্য, একজন মুসলিম প্রিন্স এভাবে এসব খাবার খেয়ে যাচ্ছেন দেখেই সন্দেহ হয় ওই ব্যক্তির। সেখান থেকেই ডালপালা ছড়াতে থাকে সন্দেহের বীজ।
অবশেষে ২০১৭ সারের নভেম্বরে ইলেকট্রনিক জালিয়াতি ও পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগসহ ১৮টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে গিগন্যাককে গ্রেপ্তার করে মিয়ামি পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়।
তদন্তে আরও দেখা গেছে, অ্যানথনি গিগন্যাক গত প্রায় তিন দশক ধরে ভুয়া প্রিন্সের পরিচয় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজনের কাছ থেকে বিনিয়োগ ও উপহারের নামে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এরপরই তাকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
/আরএম