প্রধান শিরোনাম

ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ভিজিডি নামে ব্যাপক সহায়তা

ঢাকা অর্থনিতি ডেস্ক:করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সাধারণ ছুটির মধ্যে ব্যাপক মানবিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এই লক্ষে ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ভিজিডি, ফিসারিজ, রিলিফ নামে দেয়া সহযোগিতায় দেশের প্রায় ১২ কোটি লোক সরকারী এই সুবিধা ভোগ করছেন। এই সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে খুলনার জেলাপ্রশাসকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। এলাকার কর্মহীন অভাবী মানুষের কাছে সরকারের সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে। ত্রাণমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬২২ পরিবারের ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ লাখ ৯১৩ (প্রায় ৭ কোটি) মানুষ এই ত্রাণের সুবিধাভোগী। আবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক, ১ কোটি ১৫ লাখ পরিবার তথা ৫ কোটি লোক বিশেষ ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ভিজিডি, ফিসারিজসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে এবং পাচ্ছেন।

সরকারের এই সহযোগিতা দিতে দেশের জেলা প্রশাসন দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে খুলনার জেলা প্রশাসক ভিন্ন মাত্র যোগ করেছেন। সরকারী নির্ধারিত কর্মসূচী বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে হতদরিদ্র, কর্মহীন মানুষের খোঁজ নিয়ে তাদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন সাহায্য। সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে এই সাহায্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে তিনি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বর ও গ্রাম পুলিশকে কাজে লাগাচ্ছেন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সমগ্র বিশ্বেই চলমান রয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নানা উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে চলছে ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’ কর্মসূচী। মাসাধিককাল ধরে চলছে জরুরী পরিষেবা ব্যতীত অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী দফতরগুলোর সাধারণ ছুটি। গণপরিবহনসমূহও বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, ছোট চাকরিজীবীসহ দিন আনে দিন খায় গোত্রের হাজার হাজার মানুষ। অসহায়, দরিদ্র কর্মহীন মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন মানবিক সহায়তা কর্মসূচী। জেলায় জেলায় সরকারী পর্যায়ে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জিআর চাল, নগদ অর্থসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য। সরকারী সাহায্যের চাল ও অর্থ জেলা ও মহানগরে জেলা প্রশাসকরা বিতরণ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওরা বিতরণ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট অধিক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সরকারী সাহায্যের সার্বিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তারও তদারকি করছেন। উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নেই এক বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা কিনা ভাসমান জনগোষ্ঠী। তৃতীয় বৃহত্তম শিল্পনগরী খুলনাতে এ জনগোষ্ঠী নেহাতই কম নয়। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে আনেকেই বসবাস করছে এ মহানগরে, যারা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হয়ে পড়েছে কর্মহীন। লকডাউন চলমান থাকায় তারা জীবিকার জন্য অন্য কোথাও যেতে পারছে না। কিন্তু জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়াও প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী এ জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশনা প্রদান করেন। খুলনার জেলা প্রশাসন, উদ্যোগে এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার নিমিত্তে এক মাস পূর্বেই গঠিত হয় ‘বেসরকারী মানবিক সহায়তা সেল’। আর ডিজিটাল ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের নিকট ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশে প্রায় একমাস যাবত চলমান রয়েছে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচী।

খুলনার জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন নিজে মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে সামগ্রিক কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। বেসরকারী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা এবং সম্পূর্ণ ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে অনুকরণীয় করা।

এ ছাড়া প্রতিদিন তৈরিকৃত ভাসমান জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুতের পর একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম প্রদান করা হচ্ছে। যে সকল পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে তাদের বাসায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যগণ খাদ্য সহায়তা প্রদান করে আসেন। খাদ্য সহায়তা প্রদানের সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যগণ তালিকার তথ্যের সঙ্গে উক্ত ব্যক্তির তথ্য মিলিয়ে নেন এবং তালিকায় তা চিহ্নিত করে রাখা হচ্ছে। যে সকল ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে না স্বেচ্ছাসেবক দল তাদের জন্য নির্ধারিত খাদ্য সহায়তা ফেরত নিয়ে আসেন এবং তা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে রিপোর্ট করেন।

প্রতিদিন প্রদত্ত খাদ্যসামগ্রী প্রাপ্ত ভাসমান ব্যক্তিদের তথ্যাবলি ডাটাবেজে আপডেট করা থাকে। উক্ত ডাটাবেজ জেলা প্রশাসন, খুলনার নিকট সংরক্ষিত আছে এবং ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে উক্ত তথ্যাদি মনিটরিং করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close