দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
ভাঙনের আতঙ্কে ঘুমহীন রাত কাটছে নদীতীরের মানুষের
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সন্ধ্যা, সুগন্ধা নদী আর আড়িয়াল খাঁ নদ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবারেও এর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়নি। এরইমধ্যে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিলীন হতে শুরু করেছে।
নদীতীরের মানুষদের প্রতিনিয়তই নিদ্রাবিহীন রাত কাটাতে হচ্ছে ভাঙন আতঙ্কে। নদীভাঙনে বিলীন হয়ে এরইমধ্যে বাবুগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে সৈয়দ মোশারফ-রশিদা একাডেমি, আবুল কালাম কলেজ সংযোগ সড়কসহ বেশ কিছু স্থাপনা, বসতবাড়ি, আবাদি জমি, দোকান ঘরসহ কয়েক একর ফসলি জমি ও ফলদ বৃক্ষ।
এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু, মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ, জামেনা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ক্ষুদ্রকাঠি গ্রাম, চরসাধুকাঠি মাদ্রাসা, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাবুগঞ্জ বাজার, মীররগঞ্জ ফেরিঘাট ও বাজারসহ বেশকিছু সরকারি-বেসরকারিসহ বহু স্থাপনা।
সবশেষ গত বুধবার (১৭ জুলাই) ভোরে শুরু হওয়া ভাঙনে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভুতের দিয়া গ্রামের কয়েকটি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা, দোকান ঘরসহ ফলদ বৃক্ষ। বর্তমানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীতীরের একটি মসজিদ, একটি স্কুলসহ বহু স্থাপনা।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, হঠাৎ রাতের আঁধারে ভাঙন শুরু হলে তারা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। রাতের আঁধারেই তাদের চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায় ৫টি বসতঘর। এরপর থেকে আশপাশের সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরে আলম বেপারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা এবং সুগন্ধা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। হঠাৎ করেই সুগন্ধ্যা নদীর দক্ষিণ ভূতের দিয়া পয়েন্টের ভাঙন তীব্র হয়েছে। এতে মুহূর্তের মধ্যে বুধবার ভোরে ৫টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ঘটনায় মালামালের ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি।
স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের সঙ্গে অমাবস্যায় সৃষ্ট জোয়ার এবং উত্তরবঙ্গ থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে নদীতে ভাটার সময় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যায়। এ থেকেই দেখা দেয় যতো বিপত্তি।
অপরদিকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমের প্রথমদিকে উপজেলার কয়েকটি বসতঘরসহ আবাদি জমি গ্রাস করে নিয়েছে রাক্ষুসে সুগন্ধা নদী।
স্থানীয়দের দাবি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকা প্রতিরোধে কাজ শুরু না করলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বাবুগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম।
এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিদর্শন করেছেন বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাবার সামগ্রিক বিতরণ করেন এবং তাদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।
/আরএম