প্রধান শিরোনামব্যাংক-বীমাভ্রমন
বৈধভাবে কত বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়া যাবে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ অর্থপাচার, হুন্ডি প্রতিরোধ ও অনানুষ্ঠানিক পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রার বহির্গমন রোধে সম্প্রতি সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের বিধিবিধান সহজ ও উদারীকরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ভ্রমণ, ব্যবসা, আউটসোর্সিং, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কোটায় আগের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিতে পারছেন বিদেশে গমনেচ্ছুরা।
তবে মনে রাখতে হবে, বিদেশে গমনকালে কোটা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাসপোর্টে এনডোর্স করে নিতে হবে। অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের শাখা ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানি চেঞ্জারকে এই বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি ও এনডোর্সমেন্টের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আমদানির বিপরীতে অগ্রিম অর্থ প্রেরণ, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থায়ন, আউটসোর্সিংসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে বিদেশ থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রহণ আগের চেয়ে সহজতর হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশে ভ্রমণের সময় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি (১২ বছরের বেশি) বছরে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত সঙ্গে নিতে পারবেন। তবে ১২ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের অর্ধেক খরচ করা যাবে। তাদের একজনের ক্ষেত্রে তা কোনোভাবেই বছরে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি হবে না। গত বছর ২৮ জুলাই বিদেশ ভ্রমণে সব দেশে ডলার নিতে সমান সুযোগ চালু করতে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন সীমা ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশভিত্তিক ডলার ব্যবহারের সুযোগের কারণে নানা বিতর্ক ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রাপ্ততা অনুযায়ী প্রতিবারে নগদ নোট আকারে ইউএস ডলার প্রাপ্তির সীমা এখন পাঁচ হাজার ডলার।
ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে নতুন রপ্তানিকারক, আমদানিকারক এবং স্থানীয় উৎপাদনকারীর বিদেশ ভ্রমণে বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়করণের সীমা প্রতিক্ষেত্রে চার হাজার ডলার। তবে তাঁদের বার্ষিক ভ্রমণ কোটা সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার। জরুরি আমদানির প্রয়োজনে বিদেশে সরবরাহকারীর অনুকূলে অগ্রিম প্রেরণের প্রয়োজন হলে কোনো ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই প্রতি ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার ডলার প্রেরণের সুযোগ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দেশের রপ্তানিকারকরা জরুরি উপকরণাদি আমদানির জন্য তাঁদের নামে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা রিটেনশন কোটা হিসাবের জমা থেকে কোনো ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই প্রতি ক্ষেত্রে ১০ হাজার ডলার অগ্রিম পাঠাতে পারেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দৈনিক ভাতা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়ার যে ভিন্ন সীমা ছিল সেটিও সম্প্রতি তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩ অক্টোবর এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলার অনুযায়ী বর্তমানে যেকোনো দেশে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রতিদিন ভাতাবাবদ ৪০০ ডলার সঙ্গে নিতে পারবেন। তবে মিয়ানমার ও সার্কভুক্ত দেশে এর পরিমাণ দৈনিক ৩৫০ ডলারের বেশি হবে না। একই সঙ্গে ট্রানজিট প্রেরণের জন্য অতিরিক্ত এক দিনের ভাতার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও সঙ্গে নিতে পারবেন তাঁরা। আগে সার্কভুক্ত দেশ ও মিয়ানমারের জন্য ৩৫০ ডলার এবং এর বাইরে অন্য সব দেশের জন্য ৪০০ ডলার পর্যন্ত নেওয়ার সুযোগ ছিল।
বৈদেশিক বিনিময় লেনদেন নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী, দেশে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলো চিকিত্সা ও আনুষঙ্গিক ব্যয়বাবদ প্রতি যাত্রায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিতে পারে। তবে এর বেশি অর্থ ছাড় করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনের দরকার হয়।
তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বৈদেশিক লেনদেনের সীমাও গত সপ্তাহে বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে যেকোনো আইটি বা সফটওয়্যার ফার্ম ব্যাবসায়িক কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি ছাড়াই বছরে ৪০ হাজার ডলারের লেনদেন করতে পারবে। আগে এই সীমা ছিল ৩০ হাজার ডলার। এ ছাড়া কার্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক লেনদেনের সীমাও বাড়ানো হয়েছে। আগে এই সীমা ছিল ছয় হাজার ডলার। এখন তা বাড়িয়ে আট হাজার ডলার করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিদেশ থেকে আগত নিবাসী ও অনিবাসী ব্যক্তি যেকোনো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে আনতে পারেন। তবে এর পরিমাণ পাঁচ হাজার ডলারের বেশি হলে এফএমজি ফরমে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে তার ঘোষণা দিতে হয়। বাংলাদেশে নিবাসী কোনো ব্যক্তি বিদেশ থেকে সঙ্গে আনা ন্যূনতম পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে জমা কিংবা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে নিবাসী বৈদেশিক অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে বিদেশ যাত্রার সময় এই অর্থ সঙ্গে নিয়েও যেতে পারেন। তবে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি আনা অর্থ দেশে আসার এক মাসের মধ্যে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে কিংবা লাইসেন্সধারী মানি চেঞ্জারের কাছে বা নিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টে জমা রাখা ওই ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিদেশ থেকে আসা অনিবাসীরা সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে বা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারেন এবং বাংলাদেশ ত্যাগকালে অব্যবহূত অংশ সঙ্গে নিতে পারেন। তবে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি হলে অনিবাসীকেও শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা দিতে হবে। এ ছাড়া ফরম ‘সি’ তে ঘোষণা ছাড়াই বিদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো পাঁচ হাজার ডলার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।