অন্যদিকে
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণী কোনটি?
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণী কোনটি? এ প্রশ্নে অনেকেরই নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রাণীর নাম আসে যারা দীর্ঘজীবী হিসেবে পরিচিত। কিছু না ভেবে অনেকেই বলে বসবেন নীল তিমি কিংবা কচ্ছপের নাম। তবে না নীল তিমি এবং কচ্ছপের চেয়েও বেশি দিন বাঁচে এমন প্রাণী আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গভীর সমুদ্রেরও বহু দীর্ঘজীবী প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাছ। এদের মধ্যে কোনো কোনোটি ১৭৫ বছর পর্যন্ত বাঁচার কথা জানা যায়। আইসল্যান্ডের সাগরে কিছুদিন আগে পাওয়া একটি কুয়াহগ ঝিনুক পরীক্ষা করে গবেষকেরা দেখেন সেটির বয়স হয়েছিল ৫০৭ বছর। যদিও এ জাতীয় ঝিনুক গড়ে ২২৫ বছর বাঁচে আর এর আগে পাওয়া এ ঝিনুকের সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৪০৫ বছর। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে তিমিই সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকে। তাও ১০০ বছর কিংবা তার থেকে আর কিছুটা বেশি।
তবে কোন প্রাণী সবচেয়ে কম সময় বাঁচে, জানেন কি? মে ফ্লাই নামে একটি পোকা সবচেয়ে কম দিন বাঁচে। এদের আয়ু মাত্র ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন। এই একদিনের মধ্যেই আবার ওরা ওদের বংশ রেখে যায়। এই পোকাটিকেই এখন পর্যন্ত পৃথিবিতে পাওয়া প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষণজীবী প্রাণী মনে করা হয়।
ধানক্ষেতে কিংবা ফসলের মাঠে এদের বেশি দেখা যায়। তবে বিভিন্ন ধরনের গাছের মধ্যে ছোট্ট ফড়িংয়ের মত পোকাটি দেখতে পাবেন। মে ফ্লাইয়ের বাচ্চাদের চেহারা আর বড়দের চেহারা কখনো এক নয়! বাচ্চাদের কোনো পাখা থাকে না, ব্যাঙাচির মতো ওরা পানিতে থাকে, পানির তলার কাদামাটির মধ্যে থাকে। বাচ্চাদের সরু সুতোর মতো ২-৩টি লেজ থাকে। আবার মাছের বা ব্যাঙাচির মতো ফুলকাও থাকে যা দিয়ে ওরা শ্বাস নেয়।
মে ফ্লাইয়ের বাচ্চাদের বলে নায়াড। বয়স্ক মে ফ্লাইয়ের আয়ু একদিন হলে কি হবে, ওর বাচ্চা কিন্তু পানির মধ্যে প্রায় এক বছর বাঁচে। পানির মধ্যে বাচ্চারা বিভিন্ন শেওলা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ খেয়ে বাঁচে। মরা গাছ ও মরা প্রাণীও ওদের খাদ্য। পরিষ্কার পানিতেমে ফ্লাইয়ের বাচ্চারা বাস করে। এরা পানিতে খুব ভালোভাবে সাঁতরাতে পারে, কিন্তু মোটেই উড়তে পারে না। পূর্ণাঙ্গ মে ফ্লাই মশার চেয়ে একটু বড়, পাখা দেখতে ড্রাগন ফড়িংয়ের পাখার মতো জালবিশিষ্ট ও স্বচ্ছ। কোথাও বসলে পাখাজোড়া উপরের দিকে ভাঁজ করে রাখে। পেটের পেছনে এ পোকার একজোড়া সরু সুতোর মতো লেজ থাকে।
বাচ্চা অবস্থায় মে ফ্লাই ২০-৩০ বার খোলস বদলায়। রাতে আলো জ্বালালে সে আলোতে ওদের আসতে দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো, পূর্ণাঙ্গ মে ফ্লাই তার জীবদ্দশায় কিছুই খায় না। মে ফ্লাই অনেক পুরনো পোকা। ডাইনোসরদেরও সিনিয়র এরা। পৃথিবীতে ডাইনোসরদের আবির্ভাবের আগে থেকেই মে ফ্লাইরা এ পৃথিবীতে ছিল। প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগেও ওদের পূর্বপুরুষদের অস্তিত্ব ছিল। পৃথিবীতে মে ফ্লাইদের কোনো কাজ হয়তো নেই, তবে ওদের বাচ্চাদের খেয়ে অনেক প্রাণী বেঁচে থাকে।
কোনো জলাশয়ের পানি দূষিত কিনা তা মে ফ্লাইদের উপস্থিতি দেখে বুঝা যায়। কোনো পানিতে ওদের দেখা না গেলে বুঝতে হবে সে পানি আসলে ভালো না, দূষিত বা অপরিষ্কার। অপরিষ্কার পানিতে কখনো মে ফ্লাইয়ের বাচ্চারা থাকে না।
রাশিয়ায় প্রতি বছর মে ফ্লাইরা এক অদ্ভুত কান্ড করে। সে দেশের প্রিমরি প্রদেশের একটি হ্রদে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে কোটি কোটি মে ফ্লাইয়ের আবির্ভাব ঘটে। সে দিনে তারা মিলিত হয় ও সে দিনেই সবাই মারা যায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই মে ফ্লাই নিয়ে নানা রকম বিশ্বাস প্রচলিত আছে। আমেরিকা ও জাপানের অনেক লোক মে ফ্লাইকে শক্তি, শান্তি, সৌহার্দ্য, পবিত্রতা, সৌভাগ্য, আনন্দ ও স্বচ্ছতার প্রতীক হিসেবে মনে করে। যে কারণে এই ছোট্ট জীবনকালের প্রাণীটি ফসলের মাঠে থাকলে এরা নিশ্চিন্ত থাকে।
/এন এইচ