প্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পদ-পদবির লোভে লবিংয়ে ব্যস্ত: রাষ্ট্রপতি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে শিক্ষা কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ নিচ্ছেন না। বরং তারা বিভিন্ন লবিংয়ে ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তনে সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে শিক্ষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ নিচ্ছেন না, অনেকে নিজের স্বার্থের জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটি অত্যন্ত অসম্মান ও অমর্যাদাকর। আপনারা ব্যক্তিগত চাওয়া ও পাওয়ার জন্য নীতি এবং আদর্শের সঙ্গে আপস করবেন না।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যেসব খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে কার্যক্রম ঠিকমতো অংশ না নিয়ে লবিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, একজন শিক্ষক নিছক একজন বক্তা নন তিনি শিক্ষাগুরু। শিক্ষকের কথা কেবল বক্তৃতা নয়-তা বাণী। আদর্শ ছাড়া, প্রচেষ্টা ছাড়া, বৃত্তি ছাড়া, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। তাই একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাধারণ মানুষ আপনাদের সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনেই দেখতে চায়। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপস করবেন না। আপনাদের মর্যাদা আপনাদেরই সমুন্নত রাখতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়, সে দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। আপনারা রাজনৈতিকভাবেও খুবই সচেতন ব্যক্তিত্ব।
সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। তোমাদের ওপর দেশের ভবিষৎ ও অগ্রগতি নির্ভর করছে। কখনও অর্জিত ডিগ্রির মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভুলণ্ঠিত করবে না। সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পথে নিজেকে সমুন্নত রাখবে।
সেখান থেকে তিনি উপাচার্যের বাসভবনে গেলে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে দুপর সাড়ে ৩টায় শোভাযাত্রা সহকারে রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।
এরপরে ডিগ্রি উপস্থাপন ও প্রদান পর্ব, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের সনদপত্র প্রদান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য, সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য, সমাবর্তন স্মারক প্রদান ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, এবারের সমাবর্তনে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারী ৩ হাজার ৪৩১ জন গ্রাজুয়েট অংশ নেন।