দেশজুড়ে

বিশ্ববাজারে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ছে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ তীব্র গরম, পানিতে অক্সিজেন কম থাকাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চাষীরা এখন কাঁকড়া চাষে মনোযোগী হচ্ছেন। বিশ্ববাজারে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের গত পাঁচ মাসে এ অঞ্চল থেকে কাঁকড়া রফতানি বেড়েছে ৮৫ শতাংশ।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) খুলনার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চল থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় ১২ লাখ ২০ হাজার ৭৫৬ দশমিক ৬ ডলার মূল্যমানের বেশি কাঁকড়া রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছর এখান থেকে কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৪৩ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জুলাই-নভেম্বর) সেই পরিমাণকে ছাড়িয়ে রফতানি হয় ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৭১২ দশমিক ৩ ডলারের কাঁকড়া। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানির পরিমাণ ৮৪ দশমিক ৭১ ভাগ বেশি।

চীনের পাশাপাশি আরো ছয়টি দেশে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে রফতানিও। চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় এ কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে।

সুন্দরবনসংলগ্ন ১৩ উপজেলায় বেড়েছে কাঁকড়া চাষ। এ ১৩ উপজেলা হল, খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা, বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর ও শরণখোলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা। এর মধ্যে খুলনার কয়রা,

পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৯৮৯ টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়।

ইপিবি খুলনা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৭১২ দশমিক ৩ ডলার মূল্যের কাঁকড়া রফতানি হয়। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৮ দশমিক ৯৫ ডলার, আগস্টে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫২ দশমিক ২০ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৩৯ দশমিক ৮৮ ডলার, অক্টোবরে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯০ ডলার ও নভেম্বরে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬১ ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রফতানি হয়। অন্যদিকে গত অর্থবছর খুলনা অঞ্চল থেকে কাঁকড়া রফতানির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৪৩ ডলার।

কাঁকড়া রফতানিকারক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান লাবু জানান, মোংলা বন্দরসংলগ্ন দিগরাজ মোকাম থেকে রফতানির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ১০ টন কাঁকড়া ঢাকার নলভোগ আড়তে পাঠানো হয়।

বটিয়াঘাটা উপজেলার ভগবতীপুরের কাঁকড়া চাষী রতন সরকার জানান, একসময় চিংড়ি ও কাঁকড়া একই ঘের বা পুকুরে চাষ করা হতো। তাতে ভাইরাসের কারণে চিংড়ির ক্ষতি হতো। কাঁকড়ার উৎপাদনও ভালো হতো না। আধুনিক চাষ পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাঁকড়া চাষে তারা লাভবান হচ্ছেন। তবে সঠিক প্রক্রিয়ায় কাঁকড়া পোনা আনতে না পারার কারণে ২০-২৫ শতাংশ কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। তার পরও লাভ থাকছে। ৫০ শতক জমিতে প্রথম দফায় ৩৫ কেজি কাঁকড়া ছেড়ে ৫ হাজার টাকা লোকসান হয় তার। তবে দ্বিতীয় দফায় লাভ হয় ৪১ হাজার টাকা।

রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সুমাইয়া সি ফুডের মো. মুসা শেখ বলেন, বিশ্ববাজারে সুন্দরবনের কাঁকড়ার চাহিদা ব্যাপক। এ অঞ্চলের কাঁকড়া অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে সুস্বাদু।

খুলনা জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাঁকড়া চাষের মৌসুম। চাষ শুরু করে চাষীরা প্রতি মাসে দুবার বিক্রিযোগ্য কাঁকড়া তুলতে পারেন। গুণগত মান ঠিক রাখতে পারলে কাঁকড়া রফতানির অবাধ সুযোগ রয়েছে, যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close