আমদানি-রপ্তানীপ্রধান শিরোনাম
বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান রয়েছে মূল্যস্ফীতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। এক্ষেত্রে কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় কারণ রেকর্ড উচ্চ শিপিং ব্যয়। পুরনো জাহাজে পণ্য পরিবহনে উচ্চ ব্যয় আগামী কয়েক বছর মূল্যস্ফীতি আরো ভয়াবহ পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে। শত শত নতুন জাহাজ পরিষেবায় না আসা পর্যন্ত ভোক্তাদের অতিরিক্ত এ খরচের বোঝা বহন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, কভিডজনিত লকডাউন ও নতুন পণ্যবাহী জাহাজের ঘাটতির কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এ পরিস্থিতি পুরনো কনটেইনার জাহাজের পণ্য পরিবহনের হারকে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। এজন্য বর্তমানে শিপিং কোম্পানির পুরনো জাহাজগুলোও সোনার খনিতে পরিণত হয়েছে।
এমন অবস্থার সুবিধা নিয়ে শিপিং সংস্থাগুলো তিন থেকে চার বছরের দীর্ঘমেয়াদী ইজারা চুক্তি করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। যেমন, সাইপ্রাসের পতাকাবাহী সিনার্জি ওকল্যান্ড নামের জাহাজটি ২০১৯ সালে ১ কোটি ডলারে কিনে নিয়েছিল গ্রিক ফার্ম ইউরোসিস। ৪ হাজার ২০০টির বেশি ২০ ফুট কনটেইনার পরিবহন করতে সক্ষম জাহাজটি এক দশক পুরনো ছিল। তবে গত বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহে বিশৃঙ্খলার মধ্যে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। এতে ওই আকারের একটি জাহাজ মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার আয় করতে পারে। মে মাসে ৬ কোটি ১০ লাখ ডলারে চার বছরের ইজারা দেয়া হয় জাহাজটি। তিন বছর আগে ক্রয় মূল্যের চেয়ে যা ছয়গুণ রিটার্ন।
শিপিং ফার্মের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিমিওন প্যারিয়ারোস বলেন, দ্রুত উত্থানশীল বাজার এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা কনটেইনার বাজারের ইতিহাসে এমন প্রবণতা কখনই দেখিনি।
শিপিং অ্যানালিটিক্স ফার্ম ক্লার্কসন রিসার্চ অনুসারে, মহামারীর মধ্যেও বিশ্বের কনটেইনার জাহাজের বহর বেড়েছে। যদিও তা শ্লথ গতিতে। ২০২০ সালে পণ্য পরিবহনকারী এ জাহাজের বহর বেড়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে ২০১৯ সালে এ বাড়ার হার ৪ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। লকডাউনের সময় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, জটের কারণে বন্দরে জাহাজ আটকে থাকা, কনটেইনারের ঘাটতি, নতুন জাহাজ নির্মাণে ধীরগতি এবং জাহাজগুলো নতুন পরিবেশগত নিয়ম মেনে চলবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা শিপিং খাতের সংকটে অবদান রেখেছে। ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়।
জেনেটার ওশেন ফ্রেইট ইনডেক্স অনুসারে, মে মাসে কনটেইনার শিপমেন্ট অর্ডারের খরচ বিস্ময়করভাবে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি সামুদ্রিক পণ্য পরিবহন ব্যয়ের হারে রেকর্ড বৃদ্ধি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য পরিবহনের উচ্চ ব্যয় এরই মধ্যে পুরনো গাড়ি ও ডাইনিং টেবিল থেকে সাইকেল পর্যন্ত সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিতে অবদান রেখেছে। ভোক্তাদের জন্য এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, ২০২১ সালের উচ্চ পরিবহন ব্যয় চলতি বছর বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট অবদান রেখেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হারের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চীনে পণ্য পরিবহন করা নাভিওস স্প্রিং জানুয়ারিতে তিন বছরের জন্য প্রতিদিন ৬০ হাজার ডলারের চুক্তি করেছে। এ ভাড়ার পরিমাণ দুই বছর আগের ৮ হাজার ২৫০ ডলারের চেয়ে সাতগুণ বেশি।
শিপিং বিশেষজ্ঞ জন ম্যাককাউন বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কনটেইনার শিপিং শিল্প সামগ্রিকভাবে ৫ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার মুনাফা পেয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ১ হাজার ৯১০ কোটি ডলার ছিল।
অতি লাভজনক হওয়ায় পুরনো জাহাজগুলো ভেঙে ফেলার হারও কমে গিয়েছে। ফলে বেড়ে গিয়েছে পরিষেবায় থাকা জাহাজগুলোর গড় বয়সও। ক্লার্কসন রিসার্চ অনুসারে, চলতি বছর কোনো জাহাজকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। এ জাহাজগুলোর গড় বয়স ১৩ দশমিক ৯ বছরে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ সালেও এটি ১১ বছর ছিল। কিছু বিশ্লেষক আশা করছেন, রেকর্ড এ হার আগামী বছর বা দুই বছরের মধ্যে পতন ঘটতে পারে। কারণ এ সময়ে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকটি জায়ান্ট জাহাজ পরিষেবায় যুক্ত হবে।