সাক্ষাৎকার

বিদ্যানন্দ কারো একার নয়, এটা সবারঃ কিশোর কুমার দাসের বিশেষ সাক্ষাৎকার

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ জীবনে দু’বার নিজেকে পৃথিবী থেকে মুছে দেয়ার চিন্তা করেছিলেন। একবার শৈশবে অভাবের বঞ্চনায়; আরেকবার পরিণত বয়সে যখন তার সব আছে, তখন। যে মানুষটির শৈশবে একবেলা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তার হাতে গড়া সংগঠনটি এখন লাখ লাখ আশাহীন মানুষের বেঁচে থাকার ভরসা। বলছিলাম বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কথা। সম্প্রতি করোনা মোকাবিলায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কিংবা এক টাকার আহারের কাজে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই। করোনার বিস্তার রোধে সংস্থাটি মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামের যেসব জায়গায় জনসমাগম বেশি, সেসব স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানো এবং মাস্ক-অ্যাপ্রোন-গাউন তৈরি ও বিতরণের কাজ করছে। এতকিছুর নেপথ্যে আছেন একজন; তিনি সুদূর পেরুপ্রবাসী কিশোর কুমার দাস।

কেমন আছেন?

করোনা জ্বরে কাঁপছে পুরো বিশ্ব, এর মাঝেও ভালো থাকার চেষ্টা করছি। ভালো আছি।

যারা দিনমজুর কিংবা অনাহারে আছেন তাদের জন্য খাবার সরবরাহ করছে বিদ্যানন্দ

আপনি প্রবাসে হলেও আপনার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ করোনাকে কেন্দ্র করে দেশে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আপনার মুখ থেকে সেগুলো নিয়ে শুনতে চাইছি-

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এছাড়া আরো বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিইসহ নানান চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করেছি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ও পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিচ্ছি। তবে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে যারা দিনমজুর কিংবা অনাহারে আছেন তাদের জন্য খাবার সরবরাহ করছি। শুরুতে পরিকল্পনাটা দুই লাখ হলেও এখন এটি পাঁচ লাখে দাঁড়িয়েছে।

দেশে দিনমজুরের সংখ্যাটা প্রায় চার কোটির মতো। সবাইকে সহায়তা করা আপনাদের পক্ষে অসম্ভব, এক্ষেত্রে অন্যান্যদের প্রতি আপনার কী বার্তা থাকবে?

আমি খুবই সাধারণ, আমি মনে করি অন্যদের প্রতি বার্তা দেয়ার যথেষ্ট যোগ্যতা আমার মাঝে নেই। তারপরও আামার মনে হয়, মহামারিকে দমাতে অবশ্যই সব সংগঠন কিংবা ব্যক্তি মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। দিনশেষে আমাদের সবারই একটাই উদ্দেশ্য থাকা উচিত- মানবকল্যাণ।

অনেক বড় পরিসরে কাজগুলো করছেন। এসব কাজের প্রশংসা সারাদেশের মানুষ করছেন। তবে, এতসব কর্মকাণ্ডের পেছনের মূল শক্তিটা কী ছিল?

এই যে বললেন, সারাদেশের মানুষ আমাদের পাশে আছেন। এটাই আমাদের মূল শক্তি। আমরা এখন পর্যন্ত যত কাজ পরিচালনা করেছি এরজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছে। যেটা দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ সম্মিলিতভাবে বহন করছেন। প্রত্যেকটি কাজেরই একটি প্রধান অংশ অর্থ, যা আপনাদের মাধ্যমে পেয়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা বাস্তবায়ন করি। করোনা পরিস্থিতিতেও মানুষ আমাদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। আরেকটি শক্তির কথা উল্লেখ করব, যেটা আমাদের স্বেচ্ছাসেবক।

বিভিন্ন জায়গায় ও পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিচ্ছে বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা

স্বেচ্ছাসেবকদের গল্পটা আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে শুনতে চাইছি…

আমি স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে কিছুই না। তারা একেকজন অনবদ্ধ, তুলনাহীন। তাদের নিয়ে বলা আমার পক্ষে অসম্ভবের সমান। বিদ্যানন্দকে আজ এই জায়গায় দাঁড় করানোর কৃতিত্ব পুরোটাই তাদের। আমাদের সকল স্বেচ্ছাসেবকরাই কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত; কেউ চাকরিজীবী কিংবা কেউ শিক্ষার্থী। সকলেই নিজ নিজ জায়গা থেকে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন। অনেকে দেশের বাইরে অবস্থান করেও আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এক্ষেত্রে আমরা তাদের অনলাইন বিষয়ক কাজে নিয়োজিত করছি। সর্বোপরি সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী লেগে পড়ছে।

কর্মসূত্রে আপনার বর্তমান অবস্থান পেরুতে। সেক্ষেত্রে বিদ্যানন্দের কার্যক্রমে আপনি সময় দিচ্ছেন কীভাবে?

নিজের ব্যস্ততার মধ্যেও সবকিছু দেখাশোনার চেষ্টা করি। এত দূরে থাকতে সব সময় খারাপ লাগে স্বাভাবিক। তবে ব্যাপারটাকে আমি অন্যরকমভাবে দেখি। আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা পরিচয়ে কখনোই গড়ে তুলতে চাইনি। বিদ্যানন্দ কারো একার নয়, এটা আমাদের সবার। অনেকেই আমার গল্প নানাভাবে তুলে ধরে বিষয়গুলো আমি এড়িতে চলতে চেষ্টা করি। দেশে থাকলে হয়তো অনেকেই এটা নিয়ে আরো বেশি আলোচনা করতো। দেশের বাইরে থাকার ফলে এটা নেই, আমার কাছে ভালোলাগাটা এখানেই। তবে সম্প্রতি দেশে আসার কথা থাকলেও দূভার্গজনকভাবে সম্ভব হয়নি। এই সময়টায় সবার সঙ্গে না থাকাটা অবশ্যই আমার জন্য খারাপ লাগা।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

আপনাকেও। ভালো থাকুন, আশেপাশের মানুষকেও ভালো রাখুন।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close