বিনোদনশিল্প-বানিজ্য
বিজ্ঞাপন সংকটে দেশি টিভি চ্যানেলগুলো
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বিজ্ঞাপন সংকটে রয়েছে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো। একটা সময় বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো বিজ্ঞাপনের জন্য টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আর সেরকমটি নেই। প্রযুক্তির এই সময়ে মানুষের বিনোদনের জন্য টেলিভিশনের পাশাপাশি ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অ্যাপস দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোও নতুন এই মাধ্যমগুলোর দিকে ছুটছে।
এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র বিদেশি চ্যানেলেই তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে বলে জানা গেছে। বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটেও আছে দেশি চ্যানেলগুলো। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাইরে বাংলাদেশ টেলিভিশনও এখন বিজ্ঞাপন সংকটে রয়েছে।
তাছাড়া চ্যানেলের সংখ্যা অনেক হওয়াতেও বিজ্ঞাপন ও তার রেট কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। টেলিভিশন মার্কেটিং এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. আনিসুর রহমান তারেক বলেন, চ্যানেলগুলোর একমাত্র আয় বিজ্ঞাপনের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কারণেই চরম অর্থ সংকটে পড়েছে দেশি চ্যানেলগুলো। দেশীয় চ্যানেলগুলোকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো বিদেশি চ্যানেলে নিয়মিত ভাবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। যদিও সরকার এটি বন্ধ করার জন্য আইন করেছে। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমাদের আন্তর্জাতিক বেশকিছু বিজ্ঞাপন সংস্থা বিদেশি চ্যানেলের ওপর আস্থা রাখে। বিদেশি চ্যানেল আমাদের দেশে নিয়ম-নীতি না মেনেই চলছে। তাই চ্যানেলগুলোর আর্থিক সংকট কাটাতে সরকারের কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে বাংলাভিশন চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মাহমুদুল আলম খান বলেন, আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো যে কারণে এখন বিজ্ঞাপপন সংকটে আছে তার বেশ কিছু কারণ আছে। বর্তমানে টেলিভিশনের বাইরে দর্শকের বিনোদনের জন্য আরো অনেক মাধ্যম এসেছে। বিজ্ঞাপনগুলো এগুলোতে ভাগ হচ্ছে। তবে আমার কাছে অন্যতম একটি কারণ হলো ‘এমআরবি’র টিআরপি। আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর অধিকাংশ দেশের বাইরের। ‘এমআরবি’ ভাষ্য মতে দেশীয় চ্যানেল কিংবা বাংলা চ্যানেলের দর্শক নেই। এই ‘এমআরবি’র টিআরপি’র ওপর বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো তাদের বিজ্ঞাপনের মূল্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু ‘এমআরবি’ কতটুকু সঠিক টিআরপি করছে সেটি দেখার জন্য আমাদের আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ঠিক হোক না হোক তাদের বিষয়টিকে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো প্রাধান্য দিচ্ছে। বেসরকারী টিভি চ্যানেল আরটিভি’র বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান সুদেব বলেন, আমাদের চ্যানেলগুলোতে যে বিজ্ঞাপন আসে তার বেশির ভাগ দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু তারা এখন অনেকে ক্ষেত্রে বিদেশি চ্যানেলের ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্বের কোনো দেশে বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারের সুযোগ না থাকলেও, বাংলাদেশে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তা দিব্যি চলছে। অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে দেশি চ্যানেলগুলো।
বৈশাখী টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান রাশেদ সীমান্ত বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন এই আয় বিভিন্ন দিকে ভাগ হয়ে গেছে। যার ফলে চ্যানেলগুলো আর্থিক সংকটে ভুগছে। চ্যানেলগুলোর এই আর্থিক সংকট দূর করার জন্য পে-চ্যানেল চালু করা প্রয়োজন। এছাড়া চ্যানেলগুলোকে মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানের দিকে জোর দিতে হবে। যে অনুষ্ঠানের দর্শক গ্রহণযোগ্যতা বেশি সেটির প্রতি বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর আগ্রহ থাকে।