প্রধান শিরোনামব্যাংক-বীমাশিল্প-বানিজ্য
বিক্রি কমছে সঞ্চয়পত্র, সুদও কমতে পারে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: সঞ্চয়পত্রে একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক বিনিয়োগ করলে আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ এমন সব শর্তের বাধ্যবাধকতা আছে যে সঞ্চয়কারীরা এখন এ খাতে বিনিয়োগে বিমুখ হচ্ছেন। আর তাই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে আশঙ্কাজনকভাবে। তুলনামূলকভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়ছে সরকারের। সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সরকারকে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়। বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হলে গুনতে হয় বেশি সুদ। সে তুলনায় ব্যাংকঋণ সস্তা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দল গত বুধবার দুই সপ্তাহের বাংলাদেশ সফর শেষ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দলটি সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাজারদরের কাছাকাছি রাখার সুপারিশ করে গেছে। আইএমএফের এ সুপারিশ মেনে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সরকার আরেক দফা কমানোর কথা চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৩২ কোটি টাকার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ১১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। তিন বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র কম বিক্রির লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কিছু পদ্ধতি আরোপ করে আসছে সরকার।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ১২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকঋণের এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্রের গড় সুদ ১১ শতাংশের বেশি ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছে সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি স্তর করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এর পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।
ভাটার অন্যতম কারণ হচ্ছে, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকের বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল করা। গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২২-এর ৪৮ ধারা যথাযথ পরিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবে জমা টাকা ১০ লাখ অতিক্রম করলেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে ব্যাংকে। এ কারণে একশ্রেণির গ্রাহক সঞ্চয়পত্র বিমুখ হচ্ছেন।
এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা ১১ শতাংশের বেশিই সুদ পান। ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা পান গড়ে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের হার গড়ে ৯ শতাংশের মতো।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এক গণমাধ্যমে বলেন, অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে, এটা উদ্বেগের দিক। সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কম হওয়ায় সুদ ব্যয় কম হবে। (সূত্র: প্রথমআলো)