দেশজুড়ে

বিএনপি অংশ না নিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এবং লক্ষ্মীপুরে মতো নির্বাচন হবে: মেজর হাফিজ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিএনপি ভোটে অংশ না নিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, একইভাবে জাতীয় নির্বাচনও হয়ে যাবে।

বুধবার (০৮ নভেম্বর) ঢাকার বনানী এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর হাফিজ এসব কথা বলেন। মেজর হাফিজ বিএনপি ছেড়ে নতুন দল গঠন করছেন, এই আলোচনার মুখে এ সংবাদ সম্মেলন করলেন তিনি।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমঝোতার উপায় বের করতে মেজর হাফিজ প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না।

সমাঝোতার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথা বলেন মেজর হাফিজ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করব, আপনারা মধ্যস্থতা করুন। জাতিসংঘ অনেক দেশে নির্বাচনে সহায়তা করে থাকে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জাতিংঘের তদারকিতে নির্বাচন চাই; তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।’

মেজর হাফিজ মনে করেন, কেবল রাজপথে স্লোগান দিলেই সরকার পতন হবে না। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই দুর্বল, কীভাবে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া যায়—সেই চিন্তা করা উচিত।

বিএনপি নেতা মেজর হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে বলে গত সোমবার বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের একজন মন্ত্রী এমন বক্তব্য দেন। এর ফলে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়।

তবে আজ সংবাদ সম্মেলনে মেজর হাফিজ বলেন, তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিএনপিতে আছি। এই দলের রাজনীতি থেকেই বিদায় নিতে চাই।’ তিনি তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তার কথাও তুলে ধরেন।

একই সঙ্গে মেজর হাফিজ উল্লেখ করেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি এই দল থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি।

মেজর হাফিজ মনে করেন, বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তাদের তত্ত্বাবধায়ক বাদ দিয়ে বিকল্প খোঁজা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত।

একই সঙ্গে মেজর হাফিজ বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় নিরপেক্ষ লোকের হাতে দেওয়া উচিত। নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে টহলে রাখা উচিত।

‘বিএনপিতে সংস্কার প্রয়োজন’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘দলের সংস্কার করুন। এভাবে রাজনৈতিক দল চলে না।’

মেজর হাফিজ বিএনপির কিছু কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ভুলে যাওয়ার কারণে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। আট বছর ধরে কাউন্সিল হয়নি এবং নতুন নেতা নির্বাচন করা যায়নি।

মেজর হাফিজ মনে করেন, বিএনপিতে সত্য কথা বলার মতো লোক নেই। খালেদা জিয়ার সামনে সাইফুর রহমান সত্য কথা বলতেন।

বিএনপিতে নিজের অবস্থানের কথা তুলে ধরে মেজর হাফিজ বলেন, ‘তিন বছর আগে ২০২০ সালে আমার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছিল। আমি লিখিত জবাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তিন বছরে আমার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কি না, তা জানানো হয়নি। হয়তো আমার বক্তব্য গ্রহণ করেছে, তাই বহিষ্কার করেনি। শোকজের তিন বছর পার হলেও কী হয়েছে, জানি না।’

মেজর হাফিজ আরও বলেন, ‘৩১ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। অনেক ষড়যন্ত্র, ভুল–বোঝাবুঝি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। খালেদা জিয়া যত দিন সুস্থ ছিলেন, কোনো সমস্যা ছিল না।’

নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। চিকিৎসার জন্য আবার দেশের বাইরে যাব। শারীরিক অসুস্থতার জন্য রাজনীতি থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, রাজনীতি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি।’

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close