দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
বাম সংগঠনের নেতাদের গাঁজার পার্টির আয়োজনে তরুণীকে রাতভর ধর্ষণ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের একটি বাসায় ডিনার ও গাঁজা পার্টির আয়োজন করে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে মৌলভীবাজারে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ৩ আগস্ট রাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
এই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন পাঁচজন। তারা সবাই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে একজন নারী সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রীও ছিলেন। ঘটনার ২০ দিন পর ২৪ আগস্ট বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন মাহমুদ এইচ খান। এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। মামলায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব তুষারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় জেলা বাসদ নেতা আইনজীবী রায়হান আনসারী ও নারী সুরক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মার্জিয়া প্রভাকে ধর্ষকের সহযোগী উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করায় মোস্তফা কামাল বিজয় নামে একজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের ওসি ইয়াছিনুল হক।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় সজিব তুষার এবং রায়হানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি সাংবাদিক মাহমুদকে গতকাল রোববার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার ও সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানের পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সোনাপুর এলাকায় সাংবাদিক মাহমুদের বাসায় ৩ আগস্ট ডিনার পার্টির আয়োজন করেন নারী সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রী মার্জিয়া প্রভা। পার্টিতে উপস্থিত হন বাসদ নেতা রায়হান আনসারী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব তুষার ও ভুক্তভোগী নারী। পার্টি শেষে সেখানে গাঁজার আসর বসানো হয়। এ সময় গাঁজা সেবন করেন। তখন ভুক্তভোগী নারীকে বেশি করে গাঁজা সেবন করান তুষার। বেশি পরিমাণ গাঁজা সেবন করানো নিয়ে সাংবাদিক মাহমুদ প্রতিবাদ করেন। তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে ওই নারীকে গাঁজা সেবনে প্ররোচিত করেন মার্জিয়া ও আনসারী। একপর্যায়ে ওই নারী ঘুমানোর কথা জানালে তুষার তাকে নিয়ে একটি রুমে চলে যান। টের পেয়ে বিষয়টি মার্জিয়া ও আনসারীকে জানান মাহমুদ।
সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে সম্পর্কের ধরন জানতে চান মাহমুদ। তাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়েছে বলে মাহমুদকে জানান মার্জিয়া ও আনসারী। এরপরও মাহমুদের সন্দেহ হয়। তিনি দরজা খুলে ওই নারীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে আনসারী ও মার্জিয়াকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন মাহমুদ। পরদিন সকালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানান ওই নারী। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে সজিব তুষার বলেছেন, সেদিন আমি তাকে ধর্ষণ করিনি।
এ বিষয়ে মার্জিয়া ও আনসারী জানান, সাংবাদিক মাহমুদ ফেসবুকে যে অভিযোগ তুলে পোস্ট দিয়েছেন তা ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ফেসবুকে দেয়া পোস্ট তার নিজের মতামত এবং আংশিক সত্য। সেদিন মেয়েটি তুষারের সঙ্গে বাসায় আসে। তুষারের সঙ্গে আমরা মেয়েটিকে কয়েকবার অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেছি। মেয়েটি স্বেচ্ছায় গাঁজা খেয়েছে এবং গাঁজা নিয়ে এসেছিল। এমনকি স্বেচ্ছায় তুষারের সঙ্গে রুমে যায়। এমনকি পরদিন বিকেল পর্যন্ত মেয়েটি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। খাওয়া-দাওয়া করেছেন। তখনও এ নিয়ে অভিযোগ করেননি। আমাদের মনে হয়েছে তুষারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এরই মধ্যে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি সামনে আনেন সাংবাদিক মাহমুদ।
ধর্ষণের শিকার নারী বলেন, পরিবার ও নিজের মানসম্মান এবং সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে মামলা করিনি। পরিবারকে জানানোর পর তারা মামলা করতে সম্মতি দেয়নি। পরে দেখলাম আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তখন মারাত্মক আঘাত পেয়েছি। তাই পরিবারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মামলা করেছি। আশা করছি, সঠিক বিচার পাব।
মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের ওসি ইয়াছিনুল হক বলেন, ভুক্তভোগী নারী মামলা করেছেন। ধর্ষণ মামলার আসামি সজিব তুষার এবং তার দুই সহযোগী রায়হান আনসারী ও মার্জিয়া প্রভা। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামি কেবি খান বিজয়। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে মামলা দুটি। একই সঙ্গে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে।
/এন এইচ