আশুলিয়াদেশজুড়েপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা; ডাকাতের আঘাতে প্রাণ গেল নিরাপত্তাকর্মীর
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আশুলিয়ায় এক বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করে পালানোর সময় নিরাপত্তাকর্মীদের বাঁধার মুখে পড়ে ডাকাতদল। পরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে নিরাপত্তাকর্মীদের উপর হামলা করলে গুরুতর আহত হন এক নিরাপত্তাকর্মী। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও দুই নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোরে আশুলিয়ার কুটুরিয়া দেওয়ান মার্কেট এলাকার আমির দেওয়ানের বাড়িতে ঢুকে ডাকাতির চেষ্টা চালায় ডাকাতদল। পরে ডাকাতি করতে না পেরে পালানোর সময় বাড়ির সামনের রাস্তায় নিরাপত্তাকর্মীদের উপর হামলা চালায় তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে থানা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল।
নিহত নিরাপত্তাকর্মীর নাম আব্দুল কাদের (৫৫)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বাসিন্দা। এছাড়া আহত অপর নিরাপত্তাকর্মীরা হলেন, আব্দুল কুদ্দুস (৫০) ও আব্দুর রশিদ (৫৫)। ৩ জনই ডাকাতির কবলে পড়া বাড়িটির বিপরীত পাশে মামুন দেওয়ানের মালিকানাধীন কারখানার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত সাড়ে ৩ টার দিকে আমির দেওয়ানের বাড়ির দ্বিতীয় তলার জানালার গ্রিল কেটে ৩ জন ডাকাত ঘরের ভেতর ঢুকে পরে। বাড়ির পেছনের দিকে অন্য বাড়ির ছাদে উঠে এই কাজ করে ডাকাত দল। ঘরে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে আমির দেওয়ানকে জিম্মি করে। পরে ডাকাতরা আমির দেওয়ানকে নিয়ে তাঁর ছেলে অয়ন দেওয়ানের কক্ষের সামনে গিয়ে তাঁকে ডাক দেন। অয়ন অবস্থা বুঝতে পেরে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে নিজের ঘরের জানালা দিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে এবং মোবাইলে প্রতিবেশীদের খবর দেয়। আশপাশ থেকে ছুটে আসতে থাকে মানুষ। অবস্থা বেগতিক দেখে কাটা জানালা দিয়েই আবার বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে ডাকাতরা। পরে পাশের একটি কারখানার তিনজন নিরাপত্তারক্ষী এগিয়ে যান। ডাকাতদের সামনে পড়লে ৩ জন নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করে ডাকাতরা। নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল কাদেরকে আহত অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে তিনি মারা যান। অপর নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল কুদ্দুসের হাত ও পা ভেঙে গেছে। এবং আব্দুর রশিদ (৫৫) শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন।
আমির দেওয়ান বলেন, তিনজন ডাকাত জানালার গ্রীল কেটে ঘরে ঢুকে তাঁরা আমার ছেলেকে ডেকে দিতে বলে। আমি ছেলের রুমের সামনে গিয়ে ছেলেকে ডাক দেই। দরজা খুলতেই সে ডাকাতদের দেখতে পেয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। পরে চিৎকার দিলে ডাকাতরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তাঁরা নিচে গিয়ে বেশ কয়েকটি গুলি ছুঁড়েছে।
আমির দেওয়ানের ভাতিজা ও পাশের নীট ২০০৭ লিমিটেড নামক কারখানার মালিক মো. মামুন দেওয়ান বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা বাসার ঠিক সামনেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। ডাকাতদল পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উপর হামলা চালায়। একজনের চোখে গুলি লাগায় পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, আমরা খবর শুনে ছুটে এসেছি। এলাকায় মাইকিংও করা হয়েছে। ডাকাতরা কিছু নিতে পারেনি। তবে আমির ভাইয়ের একটি আইফোন নিয়ে গিয়েছিল। পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটিও স্থানীয় একটি মসজিদের ভেতর ফেলে যায়। পরে স্থানীয় কেউ সেটি খুঁজে পেয়ে আবার ফেরত দিয়েছে। আমরা আতংকিত। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, ওই বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ৩ জনকে দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তারক্ষী কিভাবে নিহত হলেন সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
/এএস