দেশজুড়ে
‘বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে এয়ারপোর্ট ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হতে পারে’
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ আগরতলা বিমানবন্দরে নিরাপদে প্লেন অবতরণে ক্যাট আই লাইট স্থাপনের জন্য জমি চেয়ে বাংলাদেশকে ভারত যে অনুরোধপত্র দিয়েছে, তা পর্যালোচনায় সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।
তিনি বলছেন, ভারতের কাছ থেকে অফিসিয়াল প্রস্তাব পাওয়ার পর সিভিল এভিয়শনকে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। তারা কাজও শুরু করেছে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তবে বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়ে দুইজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভারতের ওই বিমানবন্দরে যদি উভয় দেশের ইমিগ্রেশন চালু হয়, তবে প্রস্তাবটি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জমি চেয়ে ভারত মৌখিক প্রস্তাব রেখেছে বলে উভয় দেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনা করছেন কেউ কেউ।
তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন, ভারতের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়েছেন তারা। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবনা পাওয়া গেছে এবং তা অফিসিয়াল, আনঅফিসিয়াল না।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের ওই এয়ারপোর্টে (আগরতলা বিমানবন্দর) নিরাপদে প্লেন অবতরণে ক্যাট আই লাইট স্থাপনের জন্য (জমি চেয়ে) তারা অনুরোধপত্র দিয়েছে, আমরা সিভিল এভিয়শনকে বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য বলেছি এবং তাদের কারিগরি কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। সিভিল এভিয়শন বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর আবার আলোচনা করব, এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে।’
এর আগে গত ৩ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগরতলা বিমানবন্দরের সংস্কারের জন্য জমি চেয়ে ভারতের কোনো চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পায়নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফরে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সরকারি সফরে বর্তমানে দিল্লি অবস্থান করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশ ওই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে, সে ধরনের সুযোগ তৈরি হলে, ভারতের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আসলে দেখা দরকার বিষয়টি আসলে কী? এটা হতে পারে দুটি দেশ মিলে একই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করছে, এটা সেটা কি না। বিশ্বে এ ধরনের এয়ারপোর্ট আছে…, কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে, বিদেশের উদাহরণ এখানে দেয়া ঠিক না। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার ইমিগ্রেশন পদ্ধতি বা কারেন্সি এক না।
‘সেই হিসেবে আমি মনে করি, যৌথ এয়ারপোর্টও বর্তমান অবস্থায় সম্ভব কি না, সেটা দেখা দরকার। জমি চাচ্ছে, মনে হয় না সিরিয়াস কোনোকিছু…, যদিও মুখে চেয়েছে, (বিমানবন্দর) সম্প্রসারণ করতে হলে তাদের এলাকায় করবে, অন্য দেশের জমি নিয়ে করবে, এটা তো হতে পারে না। সেটা হলে তো এর মধ্যে পৃথিবী উল্টাপাল্টা হয়ে… সেটা সম্ভব না। তবে যৌথভাবে এয়ারপোর্ট ব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’
ভারতকে জমি দিয়ে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কোনো বিষয় থাকবে না মত দিয়ে অধ্যাপক ইমিতয়াজ বলেন, ‘এটা স্বার্বভৌমত্বের বিষয়। জমি যদি যৌথভাবে ব্যবহার করা যায়, অন্য দেশের মতো একই এয়ারপোর্ট যৌথভাবে রানওয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে, ইমিগ্রেশন যৌথভাবে করা হয়, সেটা হলে বাংলাদেশে বিমানও সেখানে নামতে পারবে এবং একইভাবে ভারতও ব্যবহার করবে, সে ধরনের কিছু হলে সম্ভব, কিন্তু এমনি জমি চাওয়া, সেটা তো কোনোভাবেই সম্ভব না।’
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে মৌখিক প্রস্তাব দেয়ার পর তারা লিখিতভাবে জানতে চেয়েছেন, ভারত আসলে কী সুবিধা চায়, কতটুকু জমি লাগবে, বা নিরাপত্তা ব্যবস্থাইবা কী হবে। এসব প্রশ্নের উত্তর মিললে বাংলাদেশের আইন অনুসারে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিমান মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মতামত জানাবে।
বাংলাদেশে এভিয়েশন নিয়ে কাজ করছে ট্রিউন প্রাইভেট লিমিলেট। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে ভারত জমি চায়? লিজ, স্বত্বত্যাগ করে, নাকি যৌথ মালিকানায়- তা আমরা এখনও জানি না।
‘লিজ হলে এক রকম, স্বত্বত্যাগ করে হলে আরেক রকম, তবে যৌথ মালিকানাধীনে হলে সেটা হতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কনসিডার করা যেতে পারে। তবে স্বার্বভৌমত্বটা নিশ্চিত করতে হবে।
/আরএম