জীবন-যাপন
বাংলাদেশে পুরুষের বিয়ের গড় বয়স কমে ২৪, বেড়েছে নারীর
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশে পুরুষের বিবাহের গড় বয়স তুলনামূলকভাবে কমেছে। তবে একইভাবে বেড়েছে নারীদের বয়স। পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স এখন ২৪ দশমিক দুই বছর। আর নারীর ১৮ দশমিক পাঁচ বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৯ সালের মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ফলাফলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগাঁরগাওয়ে পরিসংখ্যান ভবন অডিটরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০১৯’প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স ২০১৫ সালে ছিল ২৫ দশমিক ৩ বছর। সেটি কমে ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক দুই বছরে। পক্ষান্তরে ২০১৫ সালে নারীদের বিবাহের বয়স ছিল ১৮ দশমিক চার বছর। সেটি কিছুটা বেড়ে ২০১৯ সালে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক পাঁচ বছরে।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৫ লাখ। সামাজিক অনেক সূচকে দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এছাড়া দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও বেড়েছে।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৬ বছর, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। এছাড়া ২০১৭ সালে ৭২ বছর, ২০১৬ সালে ৭১ দশমিক ৬ বছর এবং ২০১৫ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর।
প্রত্যাশিত গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে মহিলাদের বেশি। ২০১৯ সালে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে ৭১ দশমিক ১ বছর। ২০১৮ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৮ বছর। ২০১৭ সালে ৭০ দশমিক ৬ বছর, ২০১৬ সালে ৭০ দশমিক ৩ বছর এবং ২০১৫ সালে ছিল ৬৯ দশমিক ৪ বছর। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে ৭৪ দশমিক ২ বছর, ৭৩ দশমিক ৮ বছর, ৭৩ দশমিক ৫ বছর, ৭২ দশমিক ৯ বছর এবং ৭২ বছর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে সঠিক তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাঠ পর্যায় থেকে বিশুদ্ধ তথ্য তুলে আনতে হবে। এ বিষয়টি সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, তথ্য যত সঠিক হবে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ততই বাস্তবসম্মত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যা ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বলেন, প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকেই বাংলাদেশের চেয়ে শুধু শ্রীলংকাই কিছুটা এগিয়ে। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ অনেক দেশ আমাদের পেছনে রয়েছে।
মনিটরিং দ্যা সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিস্টিক অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়ার কারণ হচ্ছে, এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ সহজেই চিকিৎসা নিতে পারছেন। তাছাড়া খাদ্যগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। পুষ্টি গ্রহণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গড় আয়ু বেড়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচবছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি। প্রায় একই রকম রয়েছে। নমুনা এলাকায় এই হার ৬৩ দশমিক চার শতাংশ। শহর এলাকায় নারীরা ৬৪ দশমিক চার শতাংশ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার করে। অন্যদিকে গ্রামে ৬২ দশমিক সাত শতাংশ নারী এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে।
তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম হচ্ছে- ৮৮ দশমিক চার শতাংশ, যেটি ২০১৫ সালে ছিল ৮৮ দশমিক দুই শতাংশ। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা ১১ দশমিক ছয় শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ছিল ১১ দশমিক আট শতাংশ।
/এন এইচ