জীবন-যাপন
বাংলাদেশে কিভাবে রিকশার আগামন?
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রিকশা। এই ত্রিচক্র যানটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের একটি প্রতীক। বলা হয়, ‘রিকশার শহর ঢাকা’। অথচ রিকশা মোটেও ঢাকার যানবাহন নয়। রিকশার উৎপত্তি বাংলাদেশে নয়। সহজলভ্য এ বাহনটি একদিনেই আসেনি বাংলাদেশে। চলুন জেনে নেয়া যাক রিকশা আগমনের ইতিহাস।
`রিকশা` শব্দটি এসেছে জাপানি `জিন রিকিশা` শব্দ থেকে। জিন্ = মানুষ, রিকি = শক্তি, শা = বাহন। যার আভিধানিক অর্থ হলো `মনুষ্যবাহিত বাহন`। শব্দের উৎপত্তি যেখানে নিঃসন্দেহে বাহনটির উৎপত্তিও সেখানে। তবে জাপানি রিকশাগুলো তিন চাকার ছিল না। সেগুলো দুই চাকায় ভর করে চলত। একজন মানুষ তা টেনে নিয়ে যেতেন।
সম্ভবত ১৮৬৮ সালে জাপানে রিকশার উদ্ভব। জাপানে তখন মিজি সাম্রাজ্যের শাসন। মূলত ভারী জিনিস বহনের জন্য রিকশা তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৭০ সালের পর জাপানে রিকশা জনপ্রিয় প্রধান বাহনে পরিণত হয়।
রিকশার প্রথম আবিষ্কারক ও ব্যবহারকারী আজো অজানা। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের ইতিহাসবিদ জনপ্রিয় এ বাহনটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবি করেন। তাই রিকশার আবিষ্কারক নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই।
মার্কিনরা দাবি করেন, ১৮৪৮ সালে আমেরিকার বোস্টন শহরের মার্কিন কামার অ্যালবার্ট টোলম্যান মিশনারিদের জন্য প্রথম রিকশা তৈরি করেন। অনেকে আবার দাবি করেন, মিশনারিদের জন্য নয়, বরং মার্কিন মিশনারি জোনাথন স্কোবি ১৮৬৯ সালের দিকে নিজের সুবিধার্থে রিকশা আবিষ্কার করেন।
তাদের দাবি, স্কোবি থাকতেন জাপানের ইয়াকোহামায়। স্কোবির স্ত্রী ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফলে তিনি চলাচল করতে পারতেন না। মূলত স্কোবির স্ত্রীর চলাচলের সুবিধার্থে তিনি রিকশা তৈরি করেন। আবার এও শোনা যায়, ১৮৮৮ সালে এক মার্কিন ব্যাপ্টিস্ট রিকশা আবিষ্কার করেন।
অন্যদিকে জাপানের ইতিহাসবিদরা দাবি করেন, ইজুমি ইয়োসুকি নামের এক রেস্তোরাঁর মালিক ১৮৬৯ সালে রিকশা আবিষ্কার করেন। তবে অধিকাংশ জাপানি তিনজনকে রিকশা আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়। তারা হলেন- ইজুমি ইয়োসুকি, সুজুজি টোকুজিরো ও তাকায়ামা কোসুকি।
তাদের দাবি, ১৮৬৮ সালেই রিকশার আবিষ্কার। ১৮৭০ সালে জাপান সরকার এ তিনজনকে এটি তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দেয়। এজন্য রিকশা চালানোর লাইসেন্স হিসেবে এ তিনজনের যে কোনো একজনের সিল লাগত অনুমতিক্রমে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাপানে রিকশার উদ্ভব হলেও বাহনটি এখন জাপানে প্রচলিত নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি প্রসার লাভ করছে এবং জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক।
জাপান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে এ বাহনের আগমন ঘটেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম ভারতের সিমলায় ১৮৮০ সালের দিকে রিকশার প্রচলন হয়। এর ২০ বছর পর অর্থাৎ ১৯০০ সালের দিকে কলকাতায় এর প্রচলন হয়।
ঢাকায় রিকশার আগমন ঘটে ১৯৩০ সালের দিকে। যদিও ‘রিকশা’ বলতে হাতেটানা রিকশাকেই বোঝানো হতো। তবে বাংলাদেশে এসে ১৯৬০ সালের দিকে এর ধরনও পাল্টাতে থাকে। রিকশার সঙ্গে চেইন লাগিয়ে দেয়া হয়, যাতে মানুষের শ্রম কমে। এভাবেই বাংলাদেশে রিকশা চলাচল শুরু হয়।
বাংলাদেশে তিন চাকার রিকশা ব্যাপক পরিচিত। সাইকেলের আদলে বানানো রিকশায় পেছনে দুটি চাকা থাকে। সিটে দু’জন বসার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কখনো কখনো দুই জনের বেশি লোকও উঠে থাকেন।
রিকশার কারণে ঢাকা শহর চলে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঢাকাকে বলা হয়ে থাকে ‘রিকশার শহর’। যানজটের জন্য অভিযুক্ত করা হয় এ বাহনকে। তাই মূল সড়ক থেকে রিকশা সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। (উইকিয়াপিডিয়া)