দেশজুড়ে

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জাতি সংঘ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন স্থানীয় সময় সোমবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান জানিয়েছে।

দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর সোমবার এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে।

যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ করেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন।

পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।’

নির্বাচনকালীন সময়ে এবং এর আগের মাসগুলোতে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব সহিংসতার গ্রহণযোগ্য তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সব দলের প্রতি সহিংসতাকে পরিহার করারও আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো-প্যাসিফিক) অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করা, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এছারা জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের সদ্য নির্বাচিত সরকারের প্রতি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে দেশের যে অঙ্গীকার, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সোমবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশে রোববারের নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর সহিংসতা ও দমন-পীড়ন হওয়াটা পীড়াদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন ফলকার টুর্ক। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচন সামনে রেখে বিগত মাসগুলোতে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে নির্বিচার আটক বা ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এ ধরনের কৌশলগুলো সত্যিকার অর্থে প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, ‘আমি সরকারের প্রতি বাংলাদেশের সব নাগরিকের মানবাধিকার যেন সম্পূর্ণভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করা এবং দেশে একটি সত্যিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য আবশ্যক শর্তগুলো জোরদারের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।’

ফলকার টুর্কের বিবৃতিতে বলা হয়, ভোট সামনে রেখে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা গণগ্রেপ্তার, হুমকি, গুম, ব্ল্যাকমেল ও নজরদারি-এসব পন্থা অবলম্বন করেছেন বলে খবর রয়েছে। আর এসবের কারণেই দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করে। অগ্নিসন্ত্রাসের মতো রাজনৈতিক সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে বলেও খবর রয়েছে। বিরোধীরা অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাসহ প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন ফলকার টুর্ক। বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুই মাসে হেফাজতে থাকা অবস্থায় অন্তত ১০ জন বিরোধী নেতা-কর্মী মারা গেছেন বা তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে খবর রয়েছে। এতে আটক অবস্থায় নির্যাতন বা গুরুতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক মানবাধিকারকর্মীকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেকে দেশ ছেড়েছেন। কয়েক ডজন গুমের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে, বিশেষত নভেম্বরেই যেগুলো ঘটেছে।

ফলকার টুর্ক বলেছেন, এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের স্বচ্ছ ও ন্যায়পরায়ণ বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নির্বাচনের প্রচার ও ভোটের দিন বিধি লঙ্ঘন ও সব অনিয়মেরও পুঙ্খানুপুঙ্খ ও কার্যকর তদন্ত হতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে গণতন্ত্র অর্জিত হয়েছে এবং সেটা যেন এখন লোকদেখানো হয়ে না পড়ে। বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, দেশের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও এটার প্রতিফলন ঘটবে। বাংলাদেশের সব মানুষের ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পর অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি। ভোটের আগে বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

নির্বাচন সামনে রেখে এবং নির্বাচনের প্রচার চলাকালে সহিংসতা ও ভয়ভীতি দেখানোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাজনীতিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো স্থান নেই।’

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সে কারণে বাংলাদেশের মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না।’

যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতা ও সক্রিয় নাগরিক সমাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি মতভিন্নতা দূর করে জনগণের স্বার্থে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভিন্ন পথ বের করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close